অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সয়লাব শ্যামনগর

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলমগীর সিদ্দিকী, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)

সাতক্ষীরায় শ্যামনগরে আগাছার মতো গজিয়ে উঠছে অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নিয়ম না মেনে অনুমোদন বিহীনভাবে এসকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো দীর্ঘ বছর ধরে পরিচালনা করে আসছেন মালিকরা। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালুর আগে পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য থাকতে হয় প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, যন্ত্রপাতি। শুধু তাই নয়, ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালুর জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নিতে হয়। ড্রাগ লাইসেন্স, প্রতিষ্ঠানের নামে ভ্যাট ও টিন সার্টিফিকেট থাকতে হয়। ক্লিনিক থেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করতে হলে অব্যশই পরমাণু রেডিয়েশনের ছাড়পত্র লাগে। সকল নিয়ম অনুযায়ী আবেদন বৈধ হওয়ার পর প্রতি অর্থবছরে নবায়ন করতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রেই মানছে না এসব নিয়মকানুন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই শ্যামনগর উপজেলায় চলছে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো। অসহায় মানুষের গলাকাটার মহাৎউসব চলছে এসব অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালে। ফলে দিনের পর দিন দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত ও সর্বশান্ত হচ্ছেন অসহায় মানুষ। আর লাভবান হচ্ছেন কতিপয় দালাল ও অসাধু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় ৩০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তথ্য আছে সিভিল সার্জনের কাছে।

এছাড়া শহরের আনাচে-কানাচে, হাটে মোড়ে, অলিতে-গলিতে চোখে পড়ে অসংখ্যা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর মধ্যে কয়েকটি ক্লিনিকের ২০১৯-২০ সাল পর্যন্ত অনুমোদন ছিল বাকিদের অনুমোদন একেবারেই নেই। চলতি বছর নবায়নের জন্য এসব ক্লিনিক আবেদন করেছে বলে কয়েক ক্লিনিক মালিক জানিয়েছেন। সরকারি বিধিমালায় নিয়ম আছে- সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫০০ গজের ভেতর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা যাবে না। এ নিয়ম না মেনেও শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশপাশে গড়ে উঠেছে স্বাস্থ্যসেবার নামে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল। বিশেষ করে শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তার অফিসের নাকের ডগায় এসব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক গড়ে উঠলেও চোখে দেখেন না, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এছাড়া হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মচারীরা অনেকাংশে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে জড়িত থাকায় কোনো নিয়মকানুন মানা লাগে না এসব প্রতিষ্ঠানের। মূলত এ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে একশ্রেণির দালাল। দালালদের মাধ্যমে ভাগিয়ে আনা হয় রোগী। বিভিন্ন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙানো থাকলেও নিয়মিত রোগী দেখতে বসেন না তারা। ধার করা খণ্ডকালীন চিকিৎসক দিয়ে চলছে জটিল অস্ত্রোপচারসহ নানা চিকিৎসা। অনুমোদনহীন এসব হাসপাতালে চিকিৎসার নামে ব্যবসা, প্রতারণা, রোগী ভোগান্তির অভিযোগ উঠছে হরহামেশাই। এছাড়া এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রায় সময়ই ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগও উঠে। উপজেলা সদরের পাশাপাশি নওয়াবেকী, মুন্সীগঞ্জ, কাশিমাড়ী, বংশীপুর, গড়ে উঠেছে অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানে নেই অ্যাম্বুলেন্স, নেই এনেস্থিয়া ডাক্তার, নেই অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা। এখানে নেই প্রশিক্ষিত নার্স। তবুও চলছ এসব প্রতিষ্ঠান। ভুক্তভোগী সাবুদ আলী জানান, এসব অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সেবা দেওয়ার চেয়ে অর্থনৈতিক হয়রানি করে বেশি। এদের মূল উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে চিকিৎসার নামে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। কোনো পদক্ষেপ না থাকায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্লিনিকের সংখ্যা। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত থাকায় পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শ্যামনগরের সচেতন মহল এসব অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান দাবি করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে।