সোনাগাজীর দরিদ্র জেলেদের মানবেতর জীবন

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

মাছ না পাওয়ায় সোনাগাজীর দরিদ্র জেলেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত ২০/২৫ দিন নৌকা নিয়ে নদীতে নামছেন না তারা। অভাব আর এনজিও’র কিস্তি পরিশোধের তাড়নায় তাদের জীবন এখন বিপর্যস্ত। ওই অঞ্চলের চরখোন্দকার জেলেপাড়ার প্রায় দেড়শ দরিদ্র জেলে পরিবার এখন বিভিন্ন জনের কাছে সহায়তা চাইছেন। গত রোববার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায় যে, নদীর কূলে ৭০-৮০টি মাছ ধরার নৌকা ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে। এ সময় নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তাদের নানান অসহায়ত্বের কথা জানান জেলেরা। এখানে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ১২০টি জেলে পরিবার। এদের মধ্যে প্রায় ৭০ পরিবারের নৌকা আছে। এছাড়া কয়েকজন মহাজনের আরও ২০টির মতো মাছ ধরার নৌকা আছে। নদীতে মাছ ধরে ঘাটে এনে আড়তের মাধ্যমে মাছগুলো নিলামে বিক্রি করেন জেলেরা। কেউ কেউ আড়তে নিলাম না দিয়ে সরাসরি বাজারে নিয়ে বিক্রি করেও জীবিকা নির্বাহ করত। তবে বর্তমান সময়ে নদীতে মাছ না থাকায় দিশেহারা এসব জেলে পরিবার। নরোত্তম জলদাশ নামে একজন পেশাদার জেলে জানান, কর্মহীন এই সময়ে পরিবার নিয়ে অভাবে আছি। ২০০ টাকার তেল পুড়িয়ে নদীতে গেলে মাছ পাই ৩০০ টাকার। কেমনে মাছ ধরতে যাব? তার ওপর মৎস্য দপ্তরের মামলার চাপে অনেক জেলে পরিবার দিশাহারা। আমরা পরিবার নিয়ে উপোষ করে মরে গেলেও কারো কাছে অভিযোগ করব না। শুধু মৎস্য অফিসের মামলা থেকে আমাদের বাঁচান।

জেলেপাড়া মৎস্যঘাট আড়তের ম্যানেজার শফিউল্লাহ জানান, অন্যান্য বছর এই সময়ে নদীতে প্রচুর মাছ থাকে। এসব মাছ এখানে নিলামে উঠতো। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে নদীর তাজা মাছ কিনে নিয়ে যেত। কিন্তু এখন নদীতে মাছ না পাওয়া যাওয়ায় আড়তে একা একা বসে থাকি। আয় রোজগারও তেমন নেই। জেলে পড়ার সর্দার প্রিয়লাল সর্দার ও কৃষ্ণধন সর্দার জানান, দীর্ঘ ৫০ বছর নদীর কূলে আছি। কিন্তু নদীতে এত মাছ সংকট আর দেখিনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে দরিদ্র জেলে পরিবারগুলো অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছে। মাছ ধরার বাইরে তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করা দরকার। স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিউল্লাহ ছুট্টু মহাজন জানান, আমার নিজের মাছ ধরার সাতটি ছোট নৌকা আছে। গত কিছু দিন এগুলো কূলে এনে ভিড়িয়ে রেখেছি। নদীতে নেমে পোষাতে পারছি না।

মহারানী জলদাশ জানান, জেলেপাড়ায় তিনটা এনজিও ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে থাকে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য করে কিংবা প্রবাসে গিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করার মতো লাখ টাকার ঋণ কেউ দেয় না। সোনাগাজী উপজেলা মৎস্য অফিসার তূর্য সাহা জানান, নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না এই খবর আমি শুনেছি। জেলে পরিবারগুলোর বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ঘুরে ফিরে তারা মাছ ধরার কাজেই ফিরে আসে। জেলেদের নামে দায়েরকৃত মৎস্য বিভাগের মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে অফিসিয়াল কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মামলার বাদী জেলা মৎস্য অফিসার। আমি ইচ্ছা করলেও তেমন কিছু করতে পারছি না। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান বলেন, জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান দরকার। আমাদের শত চেষ্টার মাঝেও জেলেদের সচেতন করা যাচ্ছে না। কিছু দিনের মধ্যেই জেলেদেরকে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হবে।