প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে ঠাকুরগাঁওয়ের জনপদ

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে ঠাকুরগাঁওয়ের জনপদ। উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে অব্যাহত রয়েছে শীতের তীব্রতা। সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে জনপদ। সেইসঙ্গে বয়ে যাচ্ছে হিমেল হাওয়া। মাঘের কুয়াশা ও হিমশীতল বাতাসে কাঁপছে ঠাকুরগাঁও জেলা। পুরো জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। অতিরিক্ত ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অনেকটাই ব্যাহত। বেলা বাড়লেও ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে গ্রাম থেকে শহর সমগ্র জেলা। শীত ও ঠান্ডায় বিপর্যস্ত এই জেলার মানুষের জনজীবন। শীত ও শীতজনিত রোগে হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে। এদিকে আবহাওয়া বিরুপ হওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো মানুষই লোকজন ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না।

জানা যায়, তীব্র শৈত্যপ্রবাহে ও ঠান্ডায় বিপর্যস্ত ঠাকুরগাঁও জেলার জনজীবন। এতে ঠাকুরগাঁওয়ে চরম দুর্ভোগে দুস্থ, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে ছিন্নমূল মানুষ ও কর্মহীন শ্রমিকরা। তীব্র শীতে প্রশাসন অনেক সামর্থবান ব্যক্তি বা সরকারি এবং বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ হলেও তা পর্যাপ্ত নয় স্থানীয়রা। টানা ৭-৮ দিন ধরে উত্তরের জনপদ ঠাকুরগাঁওয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, ঠান্ডা বাতাসে নাকাল হয়ে পড়েছে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, দুস্থ ও অসহায় পরিবারগুলো। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে ছিন্নমূল মানুষ ও কর্মহীন শ্রমিকরা। গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে দিন কাটছে তাদের। অনেকে খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। তবে খড়কুটোর আগুন জ্বালিয়েও ঠান্ডা নিবারণ হচ্ছে না। অব্যাহত শীতে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রা প্রায় থমকে গেছে। কাজ-কর্মে গতি কমে যাওয়ায় অনেকের রোজগারও কমেছে। একদিকে অসহায়, দরিদ্র, দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষ তীব্র শীত, হিমেল হাওয়া ও ঠান্ডায় অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। আর অন্যদিকে কর্মজীবী শ্রমিকরা ঠান্ডায় কাজ করতে না পেরে না খেয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে পরিবার পরিজন নিয়ে। এদিকে কুয়াশা ও শীতে কৃষি ও কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কুয়াশা ও শীতে রাস্তায় গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। গাড়ি চালাতে গেলেও দিনের বেলাতেই হেড লাইড জ্বালিয়েই গাড়ি চালাতে হচ্ছে। তবে এই শীতে অনেক ব্যক্তি বা সংগঠনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আবার তীব্র শীত ও ঠান্ডায় অনেক মানুষ শীত ও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি।

ঠাকুরগাঁওয়ে তাপমাত্রা নিরূপণের কোনো কার্যালয় নেই। তবে কৃষি সম্প্রসাারণ অধিদপ্তর প্রতিদিন তাপমাত্রা পরিমাপ করে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ৪-৫ ধরে প্রথমে মৃদু ও পরে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে জেলায়। গত শুক্রবার সকাল ৭টায় জেলায় সর্বনিম্ন ৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৭-৯৮ শতাংশ। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন ৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৫-৯৬ শতাংশ।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ জেলায় এবার প্রচণ্ড শীত ও শৈত্যপ্রবাহ চলছে। বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি এবার। প্রচন্ড শীতে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আর এই তীব্র কুয়াশায় বীজতলাসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে কৃষি বিভাগহ কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে সমস্যার সমাধানে।

শহরের ইসলামনগর এলাকার বাসিন্দা তহিদুল ইসলাম বলেন, প্রচণ্ড শীতে ও ঠান্ডায় বিপর্যস্ত ঠাকুরগাঁও জেলার জনজীবন। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ার কারণে প্রচণ্ড ঠান্ডা বেড়েছে। ঘন কুয়াশার চাদরে পুরো শহর ঢেকে থাকছে। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শ্রমজীবীদের কাজে স্থবিরতা চলে এসেছে। আবহাওয়া বিরূপ হওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো মানুষই লোকজন ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা তবারক আলী জানান, মনে হচ্ছে তাপমাত্রা জিরো ডিগ্রিতে নেমে গেছে। তীব্র শীতের কারণে তারা বাইরে বের হতে পারছেন না। অনেকের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। তীব্র শীতে কাজ না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে।

প্রচণ্ড শীতে শীতবস্ত্র ও কম্বল না পাওয়া কষ্ট পাওয়া বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম নজি বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবারও প্রচণ্ড শীত। শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত এ অঞ্চলের মানুষের জনজীবন। তবে শহরের চেয়ে গ্রামে শীত ও শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। উপজেলা প্রশাসন থেকে সামান্য কিছু কম্বল পেয়েছি। কিন্তু এগুলো চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এই ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষ খেটে খাওয়া ও দরিদ্র। তাই তাদের কষ্ট লাঘবে জেলা, উপজেলা প্রশাসনসহ সব বিত্তবানদেও এগিয়ে আসতে হবে বলেও জানান তিনি।

ঠাকুরগাঁও হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রকিবুল আলম বলেন, কয়েক দিন ধরে ঠান্ডাজনিত রোগী হাসপাতালে বেশি আসছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ শিশু ও বৃদ্ধ। বিগত এক সপ্তাহের প্রায় সাত শতাধিক মানুষ এই ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ’ মানুষ অতিরিক্ত ঠান্ডা ও ঠান্ডাজনিত রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর যারা চিকিৎসা নিচ্ছে আমরা স্বল্প সামর্থেও মধ্যেও আমরা তাদেরকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর এই শীতে শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রথম দফার উপজেলায় প্রাপ্ত বরাদ্দকৃত কম্বলগুলো ইউনিয়নে চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফারগুলোও শুরু করেছি। আস্তে আস্তে সেগুলো বিতরণ হচ্ছে।