গরু চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

পাবনার ঈশ্বরদীতে গরু চুরি ঠেকাতে রাতে দলবেঁধে পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসী। গ্রামীণ পাকা সড়কে বসিয়েছেন চেকপোস্ট। রাত ১২টার পর এ সড়কে চলাচলকারী সন্দেহভাজন গাড়ি চেকপোস্টে থামিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামীণ সড়কে চেকপোস্ট বসানো ও পাহারা দল গঠন করা হয়। এরপর একে একে বয়রা, খালিশপুর, বাড়াহুসিয়া, দরগাবাজার, পাড়াশিধাই, হাতিগাড়াসহ আশপাশের আরো কয়েকটি গ্রামে রাত জেগে পাহারা দেওয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে আশঙ্কাজনকভাবে গরু চুরি বেড়ে যায়। পাশাপাশি মোটরসাইকেল, ভ্যান ও অটোবাইক চুরির ঘটনাও ঘটতে থাকে। অনেকের বাড়ি ও দোকান থেকে গেটের তালা কেটে ঘটছে চুরির ঘটনা। কোনোভাবেই তাদের দৌরাত্ম্য থামানো যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামবাসী রাতে পাহারা বসিয়েছেন। সুলতানপুর গ্রামের নবী ফকির বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান ও থানার ওসির সার্বিক সহযোগিতায় আমরা দলবদ্ধভাবে রাতে চুরি ঠেকাতে পাহারা দিচ্ছি। পাহারা টিমের প্রতি সদস্যের হাতে লাঠি, টর্চলাইট ও বাঁশি আছে। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলেই একসঙ্গে বাঁশি বাজাই। এতে পাহারার অন্য দলের সদস্যরা এসে উপস্থিত হয়। আবার চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশিও চলছে। গ্রামবাসী সবাই আনন্দের সঙ্গে পাহারা দিচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাতে মুড়ি খাওয়া ও খিচুড়ি রান্নার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। রাত জেগে পাহারা দেওয়ায় বর্তমানে চোরের উপদ্রুব কমেছে। পুলিশের টহল দল প্রায় প্রতিরাতেই আমাদের এলাকায় এসে খোঁজখবর নিয়ে যায়।’

দাশুড়িয়া ইউনিয়নের বয়রা গ্রামের কৃষক আশরাফুল আলম চেতন বলেন, ‘১৪ জানুয়ারি দিনগত রাত ৩টার দিকে আমার গোয়ালঘর থেকে দুটি গরু চুরি হয়েছে। গরু দুটির মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা।’ ১৩ জানুয়ারি রাতে সুলতানপুর গ্রামের আব্দুল বাতেন বিপুলের গোয়ালঘরের তালা কেটে একটি গাভি চুরি করে নিয়ে গেছে সংঘবদ্ধ চোরের দল। তিনি জানান, চুরির কাজে ব্যবহার করা হয় পিকআপ ও চোররা নিজেরা চড়েন সাদা রঙের মাইক্রোবাসে। সুলতানপুরের পার্শ্ববর্তী পাড়াশিধাই গ্রামের কৃষক আজাহার আলী বলেন, ‘১৩ তারিখ রাতে গোয়ালঘর থেকে তিনটি গাভি করে চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। চোরদের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের রুখতে চেষ্টা করি। কিন্তু তাদের কাছে ধারালো অস্ত্র (রাম দা, চাপাতি, ছুরি) থাকায় আমরা তাদের ধাওয়া করেও আটকাতে পারিনি।’ বয়রা গ্রামের আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, চুরি করা গরু পাচারের জন্য পিকআপ ও নিজেদের জন্য মাইক্রোবাস ব্যবহার করতে দেখা গেছে চোরচক্রের সদস্যদের। গবাদিপশু চুরির কারণে অতিষ্ঠ এলাকার বাসিন্দারা। সাঁড়া ইউনিয়নের মাজদিয়া ইলশামারি গ্রামে গত ১০ জানুয়ারি রাতে শহীদ মণ্ডলের দুটি বলদ ও একটি গাভি এবং মাজদিয়া পশ্চিম খাঁ পাড়ার সাইফুলের বাড়িতে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা চুরি করেছে সংঘবদ্ধ চোরের দল। দাশুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বকুল সরদার বলেন, আমাদের ইউনিয়নে গরু চুরিসহ আরো বেশকিছু চুরির ঘটনা ঘটার পর এলাকাবাসী আমার কাছে এসেছে।

আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। সবার মতামত নিয়ে চুরি ঠেকাতে রাত জেগে গ্রাম পাহারা ও চেকপোস্ট বসানোর পরামর্শ দিয়েছি। এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, গরু চুরির ঘটনায় বিভিন্ন গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। গ্রামবাসী নিজেরাই রাতে পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। আশা করি গরু চুরিসহ অন্যান্য চুরির ঘটনা কমে যাবে।