ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কেশবপুরে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন কারুশিল্পীরা

কেশবপুরে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন কারুশিল্পীরা

যশোরের কেশবপুরে কুটির শিল্পের গ্রামখ্যাত আলতাপোল তেইশ মাইল। এ গ্রামের প্রায় ২ হাজার নারী ও পুরুষ কুটির শিল্পের সাথে জড়িত থেকে সংসার চালিয়ে আসছেন। এসব পরিবারে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জীবিকায়ন শিল্পপল্লী। জানা গেছে, এ পল্লীর প্রায় ৬০০ পরিবার সরকারি অর্থ ও প্রশিক্ষণ সহায়তায় নিজেদের ব্যবসার উন্নয়ন করার সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে তারা ঘুরে দাঁড়াবেন এমনটি আশা করছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-৩ এর আওতায় কেশবপুর উপজেলার আলতাপোল তেইশ মাইল গ্রামকে কারুশিল্প পল্লী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার আলতাপোল তেইশ মাইল গ্রামে কাঠ দিয়ে তৈরি হয় ফুলদানি, কলস, বাটি, পাউডার কেস, বয়াম, ডিম সেট, আপেল সেট, খুনতি, হামাম, পিঁড়ে, বেলান, অ্যাশট্রে, মোমদানি, হারিকেন, পেন্সিল ফুলদানি, চরকা, ধামাপাতি, কয়েরদানি, টিফিন বক্স, ব্যাংক, সিঁদুর বাক্স ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সামগ্রী। তৈরি এ কুটির শিল্প এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গড়ে উঠেছে প্রায় ৪০০ কারখানা।

এ সমস্ত কারখানায় অর্থাভাবে থাকা গ্রামের অধিকাংশ মানুষের সংসারে কুটির শিল্পের মাধ্যমে এসেছে স্বচ্ছলতা। আর এ দিয়ে তাদের জীবনযাপন চলে। কেশবপুরের আলতাপোল তেইশ মাইল গ্রামে কাঠজাত পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন ও বাজার প্রসারের লক্ষ্যে এক পণ্য এক পল্লীভিত্তিক ‘বিআরডিবির জীবিকায়ন শিল্পপল্লী’ গড়ে উঠেছে। গত বছর স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচাযর্য শিল্পপল্লী’ উদ্বোধন করেন। এ পল্লীর প্রায় ৬০০ পরিবার সরকারি অর্থ ও প্রশিক্ষণ সহায়তায় নিজেদের ব্যবসার উন্নয়ন করার সুযোগ পাবেন। আলতাপোল গ্রামেরই কয়েকজন বেকার যুবক নিজেদের বুদ্ধিমত্তায় প্রথমে একটি কুটির শিল্পের কারখানা স্থাপন করে। শুরু হয় আলতাপোল গ্রামে কুটির শিল্পের যাত্রা। বর্তমানে এ গ্রামের প্রায় ৪০০ কারখানায় প্রায় ২ হাজার শ্রমিক সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকে। প্রতিমাসে শ্রমিকদের আয় হয় প্রায় ৬ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা। কাঠ সরবরাহের কাজে জড়িত শতাধিক মানুষ। এরা সবাই এখন অর্থনৈতিক সচ্ছলতায় ফিরে পেয়েছেন স্বাবলম্বীতা।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রথমে কাঠ ক্রয় করে সমিলের সাহায্যে লগ তৈরি করা হয়। এরপর এই লগগুলো কুটির শিল্পের বিভিন্ন কারখানায় মেশিনের সাহায্যে বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করছেন শ্রমিকরা। এখানকার তৈরি কাঠের উপকরণগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় প্রতিনিয়ত সরবরাহ করা হয়। কথা হয় আলতাপোলের কুটির শিল্পর মালিক কবির হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে পেন্সিলদানি, ফুলদানি, চরকা, খুনতি, হামাম, বয়েম, পিঁড়ে, বেলান, অ্যাশট্রে, ব্যাংক, ধামাপাতি, কয়েরদানি, টিফিন বক্সসহ প্রায় শতাধিক রকমের উপকরণ তৈরি করা হয়। ১০ জন শ্রমিক প্রতিদিন এ কারখানায় কাজ করেন। কুটির শিল্পর মালিক রবিউল ইসলাম বলেন, এখনকার তৈরি ফুলদানি, চরকা, খুনতি, হামাম, পিঁড়ে, বেলান, অ্যাশট্রে চাহিদা বেশি। সাতজন শ্রমিক প্রতিনিয়ত কাজ করে। কাজের মজুরি হিসেবে পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন শ্রমিকরা। পারুল বেগম ও ডালিম হোসেন বলেন, কাজ হিসাবে একজন শ্রমিক প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান।

শ্রমিক আলতাপোলের জাহাঙ্গীর হোসেন, আবদুল হান্নান, রফিকুল ইসলামসহ অনেক শ্রমিক গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন। কুটির শিল্প মালিক মোশারফ হোসেন দুলু জানান, উৎপাদিত পণ্যগুলো বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। তবে ফেনী, রংপুর, কুমিল্লা ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট এলাকায় বেশি সরবরাহ করা হয়। কুটির শিল্প উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে কয়েক হাজার শ্রমিক। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: তুহিন হোসেন বলেন, বিআরডিবি জীকিকায়ন শিল্পপল্লীর আওতায় তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও মূলধন সহায়তাসহ বিভিন্ন প্রমোশনাল সহায়তা প্রদানপূর্বক তাদের জীবিকায়নকে লাভজনক পযার্য়ে উন্নীতকরণে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত