লাগেজ থেকে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নারী গ্রেপ্তার

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মধুখালী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

ফরিদপুরে কোতয়ালী থানার চাঞ্চল্যকর অজ্ঞাতনামা স্যুটকেসের ভেতর পাওয়া লাশের মূল হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার ও মালামাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিং এ সাংবাদিকদের ?এসব তথ্য জানান ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম জানান, গত ২৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৭ দিকে কোতয়ালী থানাধীন গোয়ালচামট নতুন বাসস্ট্যান্ড গোল্ডেন লাইন কাউন্টারের পূর্ব দিকে ১টি পরিত্যক্ত লাগেজ দেখে স্থানীয় লোকজন ৯৯৯ এ কল দিলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় লাগেজের তালা ভেঙে খুলে অজ্ঞাতনামা পুরুষের লাশ দেখতে পায়।

১টি প্রাথমিকভাবে ডিসিস্টের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় কোতয়ালী থানার এসআই (নিঃ) মোঃ শামীম হাসান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশের একটি চৌকস টিম মামলাটির তদন্ত শুরু করে। উন্নত তথ্য-প্রযুক্তি ও স্থানীয় তদন্তের মাধ্যমে জানা যায় গত ২৭ জানুয়ারি ?সকাল অনুমান ৮টায় অজ্ঞাতনামা ১ জন বোরকা পরিহিত মহিলা মাহেন্দ্র গাড়িতে এসে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিকাশ পরিবহনে ১টি টিকিট কাটে এবং লাগেজটি গাড়ির মালামাল রাখার বক্সে রেখে নাস্তা করার কথা বলে পালিয়ে যায়।

নির্ধারিত সময়ে গাড়িটি ছাড়ার মুহূর্তে লাগেজের মালিককে না পেয়ে গাড়ি কর্তৃপক্ষ লাগেজটি ঘটনাস্থলে রেখে যায়। প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে গভীর তদন্তকালে পুলিশ টিম রাজবাড়ীর গোয়ালন্দঘাট থানাধীন গোয়ালন্দ বাজার থেকে মাহেন্দ্র গাড়ি ও গাড়ির ড্রাইভারকে শনাক্ত করে পুলিশি হেফাজতে নেয়। তার দেয়া তথ্যমতে লাগেজ বহনকারী রিকশাচালককে হেফাজতে নিয়ে গোয়ালন্দঘাট থানাধীন পতিতা পল্লির জনৈক রুবেল মাতুব্বর এর বাড়ির ২য় তলার ভাড়াটিয়া রোজিনার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঘটনার পর হতে রোজিনা পলাতক ছিল। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রোজিনাকে ডিএমপির কদমতলী থানাধীন জুরাইন এলাকার জনৈক মোঃ দেওয়ান বাড়ির ৬তলা হতে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি রোজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর ধরে গোয়ালন্দঘাট দৌলতদিয়া পতিতা পল্লিতে আছে। তার বয়স যখন ১৪ বছর তার বাবা-মা তাকে বিয়ে দেয়। বিবাহের কিছু দিন পর তার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লির চায়ের দোকানদার জনৈক হাকিম এর সহিত তার ২য় বিবাহ হয়। হাকিম মারা যাওয়ার পর সে জনৈক সুজনকে ৩য় বিবাহ করে।

আসামি আরো জানায়, এ মামলার ডিসিস্ট মিলন প্রামানিক এর বাড়ি পাবনা সদর হলেও রাজবাড়ী জেলায় বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করত এবং মাঝেমধ্যে যৌন পল্লিতে আসত। গত ২৬ জানুয়ারি উক্ত ডিসিস্ট আসামির ভাড়া বাসায় যায় এবং গত ২৭ জানুয়ারি রাত অনুমানিক ২টার দিকে তাদের মধ্যে টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ডিসিস্ট আসামির মাকে তুলে অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ দিলে আসামি ক্ষিপ্ত হয়ে তার পরিহিত ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচ দিয়া ডিসিস্টকে হত্যা করে। ডিসিস্ট এর মৃত্যু নিশ্চিত হলে তাকে খাট হতে নামিয়ে লাশটি কালো রঙের ১টি কম্বল, ১টি সাদা লাল বেগুনী রঙের বড় বেডশীট, একই রঙের ৩টি বালিশের কাভার দ্বারা মুড়িয়ে তার ঘরে থাকা বড় ১টি লাগেজ এর ভেতরে রাখে।

পরে সকাল সাড়ে ৬টায় ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে লাশ ভর্তি লাগেজটি নিয়ে রিকশাযোগে গোয়ালন্দ বাজারে যায়। সেখান থেকে ফরিদপুর যাওয়ার জন্য ৬০০ টাকা দিয়ে ১টি মাহেন্দ্র গাড়িতে লাশ ভর্তি লাগেজসহ আসামি ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড গোল্ডেন লাইন কাউন্টারের পূর্ব পাশে বিকাশ পরিবহনে সকাল ৮টা ২৫ মিনিটের গাড়িতে টিকিট কাটে এবং লাশ ভর্তি লাগেজটি গাড়ির হেলপারের সহায়তায় গাড়ির বক্সের সামনে রাখে। গাড়ি ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হলে কৌশলে নাস্তা খাওয়ার কথা বলে সে দ্রুত পালিয়ে যায়।