যশোরে মিলেছে সহস্রাধিক বছর আগের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

যশোরের ধনপোতা ঢিবিতে মিলেছে সহস্রাধিক বছরের আগের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। প্রাচীন স্থাপনার সন্ধানে প্রায় দুই মাস ধরে বিরাট রাজার ধনপোতা বা গুপ্তধনের ঢিবি খনন করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। গতকাল প্রথম পর্যায়ের এই খনন শেষ হচ্ছে।

এই খননে প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ উন্মোচিত হয়েছে এবং প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে আরও খননের পর বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে জানিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন। সংশ্লিষ্টরা জানান, যশোরের মণিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নে এই বিরাট রাজার ধনপোতা বা গুপ্তধনের ঢিবির অবস্থান। এর আগে এই উপজেলার ভোজগাতি ইউনিয়নে সন্ধান মেলে দমদম পীরের ভিটার। যা লালমাই পাহাড়ের বৌদ্ধ বিহার সভ্যতার সমসাময়িক। এবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খনন করছে বিরাট রাজার ধনপোতা বা গুপ্তধনের ঢিবি। এর মাধ্যমে সহস্রাধিক বছরের আরও একটি প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন যুক্ত হলো যশোরে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন জানিয়েছেন, ধনপোতা ঢিবিতে গত ৩ ডিসেম্বর খনন শুরু হয়। সেখানে প্রাচীন স্থাপনার নিদর্শন পাওয়া গেছে। ৩১ জানুয়ারি এই পর্যায়ের খনন শেষ হচ্ছে।

এরপর এটিকে ভরাট করে রাখা হবে। পরবর্তীতে পুনরায় খনন করা হবে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানান, গুপ্তধনের ঢিবিতে পাওয়া ইটের সঙ্গে মণিরামপুরের দোনার অঞ্চলের দমদম পীরের ঢিবি ও কেশবপুরের ভরতভায়নার দেউল ঢিবির অনেক মিল রয়েছে। তাদের ধারণা এখানকার স্থাপনাগুলো এক হাজার থেকে বারোশ’ বছর আগের নিদর্শন। খননকাজের দায়িত্বে থাকা বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের কাস্টডিয়ান আরিফুর রহমান ও কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির কাস্টডিয়ান আল আমিন জানান, ২০০৬ সালে মণিরামপুরের দোনার এলাকায় দমদম পীরের ঢিবি খনন করা হয়। মূলত তখন খেদাপাড়া অঞ্চলের এ ধনপোতা ঢিবির সন্ধান মেলে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে খেদাপাড়া এলাকার বিরাট রাজার ধনপোতা এ ঢিবির কাজ শুরু হয়। খননের দ্বিতীয় দিনেই একটি দেওয়ালের সন্ধান মেলে। পরে আরও একটি দেওয়ালের সন্ধান পাওয়া যায়। দেয়ালে দুই ধরনের ইট পাওয়া গেছে। একটি ইটের দৈর্ঘ্য ৩২ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১৬ ও উচ্চতা ৫ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। অন্যটির দৈর্ঘ্য ৩৬ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ২২ ও উচ্চতা ৬ সেন্টিমিটার। দেওয়ালের গাঁথুনি কাদার। দেওয়ালে চুনের জমাট বাঁধা রয়েছে। এছাড়া খননে মৃৎপাত্র, পাথরের টুকরো, বাটি, পশুর হাড় ও পেরেক পাওয়া গেছে। ধনপোতা ঢিবিটির বর্তমান মালিক খেদাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পঙ্কজ বিশ্বাস। পঙ্কজ বিশ্বাসের ছেলে কলেজপড়ুয়া ছাত্র প্রতাপ বিশ্বাস জানান, ৫৭ শতক এলাকার ঢিবিটি তাদের ঠাকুরদাদাদের পৈত্রিক সম্পদ। তাদের সাত পুরুষ ওই ঢিবিতে কোনো বসতি দেখেননি। পরিত্যক্ত ঢিবিটি ঝোপঝাড়ে ভরে যায়। আশপাশের বসতির গবাদিপশুর খাদ্য ও রান্নার জ্বালানির জোগান হয় এই বাগান থেকে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্র আরও জানায়, ঐতিহ্যের যশোরে ছড়িয়ে রয়েছে প্রাচীনকালের বিভিন্ন সময়ের প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খ্রিস্টীয় ৭-৮ দশকে নির্মিত কেশবপুর উপজেলার ভরতভায়নার ভরত রাজার দেউল, একই উপজেলার মির্জানগরের মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে নির্মিত হাম্মামখানা, সাগড়দাঁড়ি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পৈত্রিক বাড়ি, মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ে তৈরি শেখপুর জামে মসজিদ, মণিরামপুর উপজেলায় সেনা বা সুলতানি আমলের দমদম পীরের ঢিবি, ঝিকরগাছা উপজেলায় সুলতানি আমলের নিদর্শন কায়েমকোলা মসজিদ, অভয়নগর উপজেলায় খানজাহান আলী মসজিদ, ১১ শিবমন্দির, যশোর শহরের চাঁচড়া শিবমন্দির, হাজী মোহাম্মদ মহসিন ইমামবাড়া। উল্লিখিত প্রতিটি স্থাপনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীন সংরক্ষিত।