তেলের ঘানি টানছে অটোরিকশা

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

তেলের ঘানি টানছে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার অটোরিকশা। মানুষ ছাড়াই অনবরত ঘুরছে। ঘোরাচ্ছে ঘানি। এতদিন সরিষার তেল তৈরিতে কলুর বলদের চল থাকলেও সেই ঘানি টানছে একটি অটোরিকশা। সরিষার দানা পিষে তেল-খৈল বের হচ্ছে। ফলে কমেছে ঝক্কি আর ব্যয়। বেড়েছে উৎপাদন-মুনাফা। অটোরিকশা মেরামতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এনামুল হক নামের এক মেকানিক এই ঘানি টানার অটোরিকশা তৈরি করেছেন। গরু ছাড়া অটোরিকশা দিয়ে এমন ঘানি টানার দৃশ্য চোখে পড়বে রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর বাজারে। সরিষার তেলের ঘানিটি রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের পাশে। এমন অভিনব উপায়ে তেল উৎপাদন করছেন পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের নামাজগ্রামের বাসিন্দা টিপু। তার অনুপস্থিতিতে ঘানি দেখাশোনা করেন আনারুল ইসলাম। টিপু বলেন, মোবাইলে প্রথম তেলের ঘানি দেখেছিলাম। এরপর যোগাযোগ করে রংপুরে যাই। সেখানে সরিষার তেল উৎপাদনের ঘানি দেখে মিস্ত্রি নিয়ে এসে তেলের ঘানি তৈরি করি। তারা ঘানিতে বলদ ব্যবহারের কথা বলেছিল। মিস্ত্রিদের জিজ্ঞাসা করি। তারা বলে, ঘানি বিদ্যুতেও ঘোরাতে পারি আবার অন্য কোনো উপায়েও ঘোরাতে পারি। এর পরই মাথায় এলো অল্প খরচে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিষয়টি। তারপর বলদের পরিবর্তে অটোরিকশা লাগাই। আনারুল ইসলাম বলেন, ২ বছর আগে কাঠের তৈরি সরিষা তেলের ঘানি করা হয়। কাঠের তৈরি ঘানির কারণে এর রং, স্বাদ ও ঘ্রাণ ঠিক থাকে। সরিষা ঘানিতে দেওয়ার ৩ ঘণ্টা পর তেল বের হতে শুরু হয়। ১০ কেজি সরিষা থেকে তেল বের হয় ৩ থেকে সোয়া ৩ লিটার। আর এক মণ সরিষা ঘানিতে ভাঙলে তেল হয় ১২ থেকে ১৩ লিটার। তেলের চাহিদা ব্যাপক। দূর-দূরান্ত থেকে সরাসরি ও অনলাইনে অনেকেই কিনে নিয়ে যায়। আমাদের সরিষার ১ নম্বর খাঁটি তেল এগুলো। সরিষার তেল বিক্রির বিষয়ে আনারুল ইসলাম বলেন, অনলাইনে ঢাকা রংপুর, পাবনা, নাটোরের মানুষ কিনে থাকে। তার মধ্যে সরাসরি বেশি তেল কিনে থাকে অনেকেই। সরিষার ১ নম্বর খাটি তেল বিক্রি করা হয়। এই তেল নিতে ক্রেতাদের খুব চাপ। বেশির ভাগ সরাসরি এখান থেকে তেল কিনে নিয়ে যায়। কোন দোকান বা আলাদা করে তেল বিক্রি করা হয় না। এখান থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। নাটোরের আহম্মেদপুর থেকে সরিষার তেল কিনতে আসা রাকিবুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম। তারা বলেন, এই ঘানির তেলের রং, স্বাদ ও ঘ্রাণ ভালো। তাই চাহিদাও বেশি, দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আসেন কিনতে। দোকানে ১৯০ টাকা লিটার হলে টিপুর ঘানিতে ২১০ টাকা লিটার। এখানকার তেলে কোনো ধরনের ভেজাল দেয় না। মানুষের আস্তা আছে টিপুর প্রতি। টিপুর দাবি কাঠের ঘানির ফলে তেলে গুণাগুণ নষ্ট হয় না। আর লোহার তৈরি ঘানিতে লোহার ঘর্ষণে তেলটা পুড়ে যায়। ফলে তেলের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। কাঠের তৈরি ঘানিতে তেল পুড়ে যায় না। এ কারণে দাম বেশি হলেও চাহিদা বেশি।