ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শ্যামনগরে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ইটভাটা

পোড়ানো হচ্ছে কাঠ
শ্যামনগরে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ইটভাটা

সাতক্ষীরায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও সরকারি লাইসেন্স ছাড়াই শ্যামনগরে অবৈধভাবে চলছে ডজন খানিক ইটভাটা। সেসব ইটভাটায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও মানছে না কেউ। এসব ইটভাটা কয়লার সাথে কাঠ, তুষকাঠ ও টায়ার পোঁড়ানো কালি ব্যবহার করে ইট পোড়ানোর ফলে বায়ু দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ এবং হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য। সাতক্ষীরা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ৯৬টি ইটভাটার মধ্যে শ্যামনগরে রয়েছে ১৪টি। এর মধ্যে ঝিকঝাক এবং সনাতনী পদ্ধতির ভাটাও রয়েছে। এসব ভাটার মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই কয়েকটির। পরিবেশের ছাড়পত্র বিহীন এসব অবৈধ ইটভাটার কোনো সরকারি অনুমোদন বা লাইসেন্স নেই। শুধুমাত্র উচ্চ আদালতে একটি রিটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর অবৈধভাবে চলছে এসব ইটভাটা। উচ্চ আদালতে রিট করার কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর অবৈধ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরদারি না থাকায় অবৈধ এসব ভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ ও তুষকাঠ এবং টায়ার পোড়ানো কালি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি উচ্চ আদালত এক আদেশে দেশের সব অবৈধ ইটভাট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ইটভাটা পুরোদমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এসব অবৈধ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লার সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ ও তুষকাঠ এবং টায়ার পোড়ানো কালি।

টায়ার পোড়ানো কালির ধোঁয়া ক্যান্সারের মতো মরণঘাতি ব্যাধির সহায়ক। ফলে বায়ু দূষণের কবলে পড়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে অবৈধ এসব ইটভাটার আশপাশে বসবাসকারি জনসাধারণ। সরেজমিন শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেছে সেখানে অধিকাংশ ভাটায় কয়লার সাথে তুষকাঠ মিশিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাথে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ ও টায়ার পোড়ানো কালি।

সদরের রামজীবনপুর এলাকায় সরেজমিন দেখা যায় সেখানে ইটভাটার পাশেই স্তূাকারে ফেলা রয়েছে জ্বালানি কাঠ। পাশের আরও একটি ঘরে রয়েছে তুষকাঠ। এ বিষয়ে ভাটার ম্যানেজার বলেন, প্রথমে কাটায় নতুন আগুন জ্বালাবার সময় ভাটার ভিতরে অল্প কিছু কাঠ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় সাথে তুষকাঠ ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, যশোরের নওয়াপাড়ার ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট করে কয়লায় পানি মিশিয়ে ওজন বৃদ্ধি করে। এছাড়া দামও অনেক বেশি। গত বছর আমার ভাটায় অনেক টাকা লস হয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে শুধুমাত্র কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো একেবারেই অসম্ভব। তাই আমরা জ্বালানি হিসেবে কয়লার সাথে তুষকাঠ ব্যবহার করছি। উপজেলার খানপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শ্যামনগরের খানপুর এলাকায় যমুনা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে সাকিব ব্রিকস নামক ইটভাটা। এই ইটভাটায় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তোয়াক্কা না করে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এবং চারপাশে স্তূপ আকারে সাজানো রয়েছে জ্বালানি কাঠ। ভাটায় ঢোকার মুখে একটি বড় ঘরে সাজানো রয়েছে তুষকাঠ। এভাবে জনবসতি এলাকায় অবস্থিত তার ভাটায় জ্বালানি হিসেবে পুরোদমে কাঠ ও তুষকাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ভাটার কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণ করে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে স্থানীয় জনসাধারণকে। একইভাবে তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো কালি ব্যবহার করা হচ্ছে উপজেলা সদরের সোনার মোড় এলাকায় এইচবি ব্রিকস ও আশা ব্রিকস, খানপুরে গাজী ব্রিকস ইটভাটা। সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বলেন, জেলার ব্রিকস ফিল্ডগুলো কাঠ ও তুষকাঠ পোড়ানো শুরু করেছে জানতে পেরে আমরা অভিযান পরিচালনা করার প্রস্ততি নিচ্ছি। অভিযানের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে এরইমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠিও দিয়েছি। ইট ভাটায় কাঠ ও তুষকাঠ পোড়ানো বন্ধসহ জেলার অবৈধ ইটভাটা বন্ধে খুব শীঘ্রই অভিযান শুরু করা হবে। উপজেলায় অধিকাংশই অবৈধ ইটভাটা রয়েছে স্বীকার করেই তিনি বলেন, এসব ভাটা মালিকরা উচ্চ আদালতে রিট করে তাদের ভাটা পরিচালনা করছেন। যে কারণে রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে দশের অধিক ভাটার রিট নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সর্ম্পকে তিনি বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের সাথে সমন্বয় করে দ্রুত জবাব পাঠাব। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, জেলার বেশ কিছু ভাটায় কাঠ ও তুষকাঠ পোড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এসব ইট ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সাথে জেলার সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত