মুরাদনগরে কৃষি জমির টপসয়েল যাচ্ছে ইটভাটায়

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মো: আরিফুল ইসলাম, মুরাদনগর (কুমিল্লা)

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় তিন ফসলি জমির বুক চিরে ছুটছে ট্রাক্টরের পর ট্রাক্টর। ফসলি জমি থেকে কাটা মাটি ইটভাটায় নিয়ে আসা। সামান্য দূরেই চলছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি থেকে অত্যাধুনিক ভেকু মেশিন দিয়ে জমির মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ। সে মাটি সংগ্রহে ব্যস্ত অসংখ্য ইটভাটার শ্রমিক। যেই জমির উপরিভাগে ধান বোনা হতো সে জমিতে এখন বিশাল আকারের গর্ত।

এভাবেই মুরাদনগর উপজেলায় বিপুল পরিমাণ ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটার পেটে। এতে করে জমিগুলো যেমন উর্বরতা হারাচ্ছে তেমনি ধ্বংস হচ্ছে এসব ফসলি জমি। এদিকে উপজেলার ৫৪টি ইটভাটা জমির টপ সয়েল কেটে নিলেও রহস্যজনক কারণে এসব দেখেও না দেখার ভান করছে স্থানীয় প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ সব সেক্টরকে ম্যানেজ করেই ইটভাটা মালিক সিন্ডিকেট মিলে উর্বর ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। এতে সচেতন মহলে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, এভাবে মাটি কেটে নিলে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি কমে গিয়ে ফসল উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দিবে। পতিত জমি, খাল, বিল, নদ-নদী, হাওর-বাঁওড় বা চরাঞ্চল থেকে মাটি কেটে নেওয়া যাবে না ইট তৈরির জন্য। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ এর ৫ নম্বর ধারায় উল্লেখ থাকলে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না মুরাদনগর উপজেলায়।

দিনের পর দিন স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে উপজেলায় গড়ে ওঠা ৫৪টি ইটভাটায় মুরাদনগর সদর, যাত্রাপুর, বাখরাবাদ, পায়র, সুবিলারচর, রানীমুহূরী, শুশুন্ডা, দারোরা, বড় আলীরচর, সোনাপুর, চাপিতলা, কোড়াখাল, বাবুটিপাড়া, ছালিয়াকান্দি, বোরারচর, চন্দনাইল, রোয়াচালা, শ্রীকাইল বিলের কৃষিজমি, গোচারণ ভূমি, জলাশয় ও গোমতী নদের পাড়ের গুঞ্জুর, ত্রিশ, দক্ষিণ ত্রিশ ও ধামঘর এলাকার মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। আইন লঙ্ঘনকারী ইটভাটার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাস্তবে ফসলি জমি ধ্বংসের মহোৎসব চলছে এই উপজেলায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খাঁন পাপ্পু জানান, কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে গর্ত করার কারণে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়। মাটির উর্বর শক্তি কমে যাওয়ার কারণে এই জমিতে আর তেমন ফলন হয় না।

এক পর্যায়ে এই জমিগুলোতে ফসল কম হওয়ার কারণে চাষিদেরও আগ্রহ কমে যায়। এই ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে উৎপাদনে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে। মাটি কাটা সিন্ডিকেটের সদস্য শাকিল, আলা, আমির হোসেন বলেন, আমরা কৃষকদেরকে ন্যায্য মূল্য দিয়েই তাদের জমির মাটি ক্রয় করি। কাউকে জোর জবরদস্তি করা হয় না। তাছাড়া সব সেক্টর ম্যানেজ করেই আমরা মাটি ক্রয় বিক্রয়ের কাজ করি। এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ বলেন, কোনো মাটি সিন্ডিকেট কিংবা ভাটা মালিকের সাথে আমার পরিচয় নেই। প্রশাসনের সঙ্গে তাদের যোগশাজসের কথাটি সঠিক নয়। মাটি কাটার বিষয়ে আমরা কোনোভাবেই কোনো ধরনের সম্মতি দেই না। এসব মাটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আমরা প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করছি। সামনের দিকেও তা অব্যাহত থাকবে।