ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তাপসহিষ্ণু গমের নতুন তিন জাত উদ্ভাবন

তাপসহিষ্ণু গমের নতুন তিন জাত উদ্ভাবন

তেলের পুষ্টি সুরক্ষায় তিসির সফল গবেষণার পর হাবিপ্রবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাপ সহিষ্ণু তিন জাতের নতুন গমের সাফল্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছেন। নতুন জাতের এই গম আবাদের ফলে ফলন বাড়বে সেই সাথে সময় কম লাগবে বলে জানিয়েছেন গবেষক।

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. হাসানুজ্জামান তার বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পর তাপ সহিষ্ণু গমের নতুন তিন জাতের উদ্ভাবন করেছেন। আশা করা যাচ্ছে খুব শিগগিরই তাপ সহিষ্ণু জাতের গম উৎপাদনে কৃষকরা বীজ পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং বিভাগের অর্থায়নে গমের নতুন জাত উদ্ভাবনের বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম শুরু হয়। তিন জাতের মধ্যে একটি জাত রোপণের ১০০ দিনের মধ্যে ফলন দিতে সক্ষম হবে। গবেষণায় দেখা যায়, গম গাছগুলোর শীষের সংখ্যা ও প্রতি শীষে পুষ্ট দানার সংখ্যা অনেক বেশি। নতুন জাতের এই গম গাছগুলোর কাণ্ডে ও ত্বকে পরিণত মোমের আবরণ ওয়ার পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় এই জাতের গম অধিক তাপ সহিষ্ণু এবং উচ্চ তাপমাত্রায় বেশি ফলন দিতে সক্ষম বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়। জানা যায়, তিনটি অনুমোদিত জাত ও একটি অগ্রবর্তি সারির বারি-৪ গমের ক্রস প্রজননের মাধ্যমে এইচএসটিইউ ডাব্লিউ-১, এইচএসটিইউ ডাব্লিউ-৪ ও এইচএসটিইউ ডাব্লিউ-৮ তিনটি নতুন ধরনের তাপ সহিষ্ণু গমের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। গবেষক প্রফেসর ড. মো. হাসানুজ্জামান বলেন, হাবিপ্রবির প্রদর্শনী খেতসহ পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, যশোর, সিলেট ও জয়পুরহাটসহ মোট ৮টি এলাকায় তাপ সহিষ্ণু নতুন জাতের গমের পরিক্ষামূলক চাষাবাদ করা হয়েছে। এগুলোর ফলনের পরিমাণ ভালো হওয়ায় চাষাবাদে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। গবেষক বলেন, তাপমাত্রা বাংলাদেশে গম চাষের একটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় আমরা তাপ সহিষ্ণু গমের জাত উদ্ভাবনের জন্য ২০১২ সাল থেকে গবেষনা কার্যক্রম শুরু করি। গত বছর প্রাথমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করায় উদ্ভাবিত তিনটি নতুন জাত অ্যাডভান্স লাইম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন কৃষকদের মাঝে ছাড়করণের জন্য উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। গবেষণার কাজে নিয়োজিত অপর গবেষক কৃষিবিদ মো. জাহিদ হাসান জানান, প্রতিবছর এটাকে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ ও সাবধানতার সাথে অগ্রবর্তী সারিগুলোকে পরিচর্যা ও সঠিক তথ্য উপাত্ত নিয়েছিলাম আমরা। চীন থেকে আমদানিকৃত বিভিন্ন রকম মার্কার দিয়ে এই জাতগুলোর ভালো বৈশিষ্ট উদ্ভাবনের চেষ্টা করা হয়। উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে তাপসহিষ্ণু গমের তিন জাত আগামীতে দেশের গম উৎপাদনে বড় অর্জন ও সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অধিক তাপের ফলে গমের শীষ হেলে পড়া রোধ করতে সক্ষম হওয়ায় উৎপাদনে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। হাবিপ্রবির পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রম সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করার জন্য ক’দিন আগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. শেখ মো. বখতিয়ার, দিনাজপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুক, হাবিপ্রবি’র উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান, কৃষি অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. বিধান চন্দ্র হালদার, কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রফেসর ড. শ্রীপতি শিকদার ও প্রফেসর মো. আরিফুজ্জামান কয়েকটি প্রদর্শনী খেত দেখে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

তারা বলেন, প্রতিবছর আবহাওয়ার পরিবর্তনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে গমের ফলন কমে যায়। তাই নতুন উদ্ভাবিত এই তিন জাতের গমের ফলন কৃষকদের উপকৃত করবে। পাশাপাশি দেশে গমের উৎপাদনও বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফলন যদি প্রতি হেক্টরে ৫ টন হয়, তাহলে কৃষকদের জন্য এটি একটি ভালো জাত হিসেবে গ্রহণ যোগ্যতা পাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত