ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাওরের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষে কৃষকের হাসি

হাওরের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষে কৃষকের হাসি

নেত্রকোনার খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ, মদন ও কলমাকান্দা উপজেলার হাওরের বিভিন্ন অংশজুড়ে রয়েছে অপেক্ষাকৃত উঁচু ভূমি।

বর্ষায় ডুবে যায়, আবার হেমন্তে জেগে উঠে অন্য অংশের অনেক আগে। যে দিকে চোখ যায়- শুকনো মৌসুমে দেখা যায় সবুজ দুর্বাঘাস, আর বর্ষায় পানিতে পানিতে সাদা।

হেমন্ত থেকে গ্রীষ্মে শুধুই গরু চড়ে এই জমিতে, বাকি সময় চলে নৌকা। পরিকল্পনার অভাব ও চাষাবাদের সুযোগ কম থাকার কারণে বছরের পর বছর ধরে পতিত থেকে আসছে এই শ্রেণির হাজার হাজার হেক্টর জমি। এবার সেই পতিত জমিতেই মিস্টি কুমড়ার আবাদ করে হাসছেন শত শত কৃষক। মিষ্টি কুমড়া চাষে উদ্বুদ্ধকরণ ছাড়াও সার, বীজ ও পরামর্শসহ নানাভাবে কৃষকদের সহযোগিতা দান করেছে কৃষি অধিদপ্তর। হাওরের নিচু জমিতে ধান চাষের পাশাপাশি উঁচু জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করা হয়েছে। এতে বেশ সাফল্যও পেয়েছেন অনেকেই। খালিয়াজুরি উপজেলার কৃষক ওমর ফারুক জানান, কৃষি বিভাগের স্যারদের কথায় গত দুইবছর ধরে আমি এই মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে আসছি। ১৫-২০ দিন পর পর জমি থেকে মিষ্টি কুমড়া উঠানো যায়।

বাজারজাত করারও ঝামেলা নেই। পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা খেতে এসে কিনে নিয়ে যায়। কুমড়া চাষ করে আমি যথেষ্ট লাভবান। আমার দেখাদেখি অনেকেই আগামী বছর তাদের জমিতে কুমড়া চাষ করবে বলে জানিয়েছেন।

মদন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: হাবিবুর রহমান জানান, চলতি বছর হাওর এলাকার বিস্তীর্ণ পতিত জমিতে লালিমা, ওয়ানাডার বল, ব্ল্যাক সুইটি, সন্ধ্যানী, শিলা, সুইট স্পট প্রভৃতিজাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করা হয়েছে। প্রচণ্ড শীতের কারণে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও বলা যায় ফলন ভালো হয়েছে। বাড়তি আয় হওয়ায় খুশি কৃষকগণ। এসব জমিতে ৩০-৪০ বছর আগে সরিষা, তিল ও মাশকলাই চাষ হতো। অধীক শ্রম ও স্বল্প লাভের কারণে এসবের চাষাবাদ থেকে একসময় সরে দাঁড়ান কৃষকরা। বর্তমানে সবজি চাষে কৃষকগণকে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। খালিয়াজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আবু ইসহাক বলেন, চলতি বছর হাওরের বিস্তীর্ণ পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে।

এতে শুধু কৃষকরা বাড়তি আয় করেছেন এমন নয়, অনেক শ্রমিকেরও কর্মের সংস্থান হয়েছে। নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, জেলায় এবার ৭১৯ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। এক হেক্টর জমিতে ধান উৎপন্ন হয় ৬ টন। সেখানে মিষ্টি কুমড়া হয় ৩০ থেকে ৩৫ টন। হাওরে ধানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। আগাম বন্যা ও শিলাবৃষ্টিতে ধান নষ্ট হতে পারে। মিষ্টি কুমড়া পতিত জমিতে চাষ করা যায়, বাড়তি কোনো খরচ নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির সম্ভাবনাও খুই কম। এর বাজার দরও বেশ ভালো। জমি থেকেই পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়। হেমন্ত মৌসুমে ধানের পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন কৃষকসহ সবাই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত