ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাড়ি পুড়ে নিঃস্ব ফজলু রাত কাটে রান্নাঘরে

বিপন্ন মানবতা সহযোগিতার অহ্বান
বাড়ি পুড়ে নিঃস্ব ফজলু রাত কাটে রান্নাঘরে

প্রতিদিনের মতো ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে দিনমজুর ফজলু মন্ডল ও তার সহধর্মিণী পরিশ্রান্ত শরীরে নিজ ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। হঠাৎ, ঘুম ভেঙে দেখেন আগুনের লেলিহান শিখায় দাও দাও করে জ্বলছে তার পাশের ঘর। কোনো রকমে প্রাণ নিয়ে দুজনে ঘর থেকে বের হয়ে পাড়া প্রতিবেশীর সহায়তায় ঘণ্টা খানেক প্রচেষ্টায় টিউবওয়েলের পানি দিয়ে বাড়িতে ধরা আগুন নেভাতে সক্ষম হন। ততক্ষণে পুড়ে সব শেষ। অভাব অনটনের সংসারে মাটি ও টিনের তৈরি দুই ঘরে থাকা সংসারের খুঁটিনাটি জিনিসপত্র সব কিছুই পুড়ে গেছে। আগের দিন কেনা এক বস্তা চালও পুড়েছে আগুনে। দুজনের পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই রক্ষা করতে পারেননি তারা। এমনি এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের খালকুলা গ্রামের আনারুল মন্ডলের ছেলে ফজলু মন্ডলের বসত বাড়িতে। তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার কোনো রকমে চলছিল। মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় শুধু স্বামী স্ত্রী থাকেন বাড়িটিতে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটে বাড়িতে আগুন লেগেছে বলে সবার ধারণা করছেন। শীতের এ সময়ে থাকা খাওয়ার কষ্টের কথা চিন্তা করে ফজলু মন্ডল স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর নিজে পাশের ছোট চটে মোড়ানো খুপড়ি একটা রান্না ঘরে কনকনে এই শীতে কোনোরকমে রাত কাটাচ্ছেন। পাড়া প্রতিবেশীর দেয়া খাবারে মেটাচ্ছেন পেটের ক্ষুধা। অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনার ছয় দিন পার হলেও নতুন করে পুনরায় ঘর নির্মাণের অর্থ না থাকায় পোড়া ঘর বাড়ি ওই অবস্থায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা সমাজের সামর্থ্যবান কেউই অসহায় ফজলুর পাশে এসে দাঁড়াননি। ড. ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত গানের প্রথম চরণ ‘মানুষ মানুষের জন্য ‘কথাটি হয়তো অসহায় নিঃস্ব ফজলুর জীবনে ঘটে যাওয়া বাস্তবতার সাথে অনেকটাই অমিল। সহযোগিতা, সহমর্মিতা কিংবা ভ্রাতৃত্ববোধে পাশে থাকার মতো কোনো শব্দই স্পর্শ করেনি আগুনে পুড়ে সব হারানো ফজলুকে। প্রত্যক্ষদর্শী ইতিকা মজুমদার বলেন, বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটারের বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে শুনি, ভেদুর বাড়ি আগুন ধরেছে। তড়িঘড়ি করে উঠে সবাই মিলে আগুন নেভাতে নেভাতে সব শেষ। ফজলু ভাই খুব গরিব। সমাজের বিত্তবান মানুষের উচিত অসহায় এই মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সরেজমিন অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ফজলু মণ্ডলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তিনি রান্না ঘরের একটি কাঠের তৈরি খাটের ওপর শুয়ে আছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আগুনে আমার ঘরবাড়ির সাথে সাথে সংসারটাও পুড়ে গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত