ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মানিকগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী হাজারি গুড়ের মেলা

মানিকগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী হাজারি গুড়ের মেলা

মানিকগঞ্জ শহরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী হাজারী গুড়ের মেলা। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই মেলার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক। দেশের ঐতিহ্যবাহী হাজারী গুড়ের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এবং দেশব্যাপী এটি ছড়িয়ে দিতে প্রথমবারের মতো এই মেলার আয়োজন করেন জেলা প্রশাসন। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক। অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দীন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র মো. রমজান আলী ও হাজারী গুড় উৎপাদনকারী মোজাফ্ফর হোসেন প্রমুখ। আয়োজকরা জানান, শীত এলে এ দেশের গ্রামের বাড়িগুলোয় পিঠাণ্ডপায়েস তৈরির আয়োজন শুরু হয়। এমন দিনে খেজুরের রস ও গুড়ের চাহিদা বেড়ে যায়। আর হাজারী গুড় হলে তো কথাই নেই। যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্য বহন করে আসছে মানিকগঞ্জের এই হাজারী গুড়। মনভোলানো স্বাদের পাশাপাশি হাজারী গুড়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, হাতে নিয়ে চাপ দিতেই গুঁড়া গুঁড়া হয়ে যায়। হাজারী গুড় তৈরির কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুধু দেশেই নয়, এই গুড়ের সুনাম ছড়িয়ে আছে দেশের বাইরেও। এই গুড়ের নামেই মানিকগঞ্জ জেলার ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে লোকসংগীত আর হাজারী গুড়, মানিকগঞ্জের প্রাণের সুর। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক বলেন, বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতির অংশ হচ্ছে পিঠাণ্ডপায়েস। হাজারী গুড় শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, এ গুড়ের পিঠাণ্ডপায়েসের স্বাদও লোভনীয়। এই হাজারী গুড়ের মেলার কারণে আজ মানিকগঞ্জের নাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। এর জন্য কাজ করতে হবে। যারা হাজারী গুড় তৈরি করে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। হাজারী গুড় তৈরি প্রধান উপাদান কাঁচা রসের অভাব রয়েছে। এর জন্য প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছেন খেজুর গাছের চারা লাগানোর। যদি মানিকগঞ্জে নতুন করে ১২ লাখ গাছের চারা লাগানো হয় ও তা থেকে রস সংগ্রহ করা যায়, তবে কয়েক হাজার টন গুড় উৎপাদান করা সম্ভব। সেই গুড় নিজ দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। ংবিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, খেজুর গাছের কমে যাওয়ায় হাজারী গুড়ের উৎপাদন কমে এসেছে। খেজুর গাছের চারা রোপণের মধ্য দিয়ে এ গুড়ের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এই শিল্পকে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। প্রত্যেক জেলায় একটি করে পণ্যকে ব্র্যাডিং করা হয়েছে। মানিকগঞ্জে হাজারী গুড়কে ব্র্যাডিং করা হয়েছে। এর ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকার নানান ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। গুড় নিয়ে মেলা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বলেন, শত বছরের লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য এই জেলায়। জেলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারী গুড়ও। এই দুই মিলিয়ে জেলার ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে ‘লোকসংগীত আর হাজারী গুড়, মানিকগঞ্জের প্রাণের সুর’। হাজারী গুড়ের ঐতিহ্য ছড়িয়ে দিতে এই গুড়ের উৎপাদন বাড়ানো এবং নতুন নতুন গাছি তৈরি করতেই এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত