ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চিনিকলের বর্জ্যে দূষিত তুলসীগঙ্গা নদী

মরছে মাছ ও জলজ প্রাণী
চিনিকলের বর্জ্যে দূষিত তুলসীগঙ্গা নদী

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে জয়পুরহাট চিনিকলের নিষ্কাশিত বর্জ্যে চিড়ি নদীর মধ্য দিয়ে তুলসীগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। দূষিত ওই নদীর মাছ মারা যাচ্ছে। এমনই অভিযোগ গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের। ফলে বিপাকে পড়েছে মৎস্যজীবীরা। এই বর্জ্য মিশ্রিত পানি নদীতে মিশে পানি বিষাক্ত হয়ে গাঢ় কালো রং ধারণ করেছে। এতে পানিতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় নদীর মাছ মরে ভেসে উঠছে বলে জানান উপজেলা মৎস্য অফিস ও স্থানীয়রা। আক্কেলপুর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য অফিসের অর্থায়নে ২০১৬ সালে তুলসীগঙ্গা নদীর নবাবগঞ্জঘাট মহাশ্মান এলাকায় নদীর বাঁকে মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়। এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিবছর সরকারিভাবে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়। এ অভয়াশ্রমের আওতায় উপজেলার আওয়ালগাড়ী, উলিপুর এবং হাস্তাবসন্তপুর গ্রামের ৩৫০ জন সুবিধাভোগী জেলে রয়েছেন। তারা সবাই তুলসীগঙ্গা নদীর মাছের ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি চিনিকলের বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত বর্জ্য নদীতে এসে পড়ায় অভয়াশ্রমসহ নদীর সব মাছ ও জলজপ্রাণী মরে ভেসে উঠেছে। নদীতে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। চিনিকলের বর্জ্য নদীতে পড়া বন্ধ না হলে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে মৎস্য দপ্তর।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে চিনিকলের অপরিশোধিত বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত বর্জ্য তুলসীগঙ্গা নদীতে ক্রমাগতভাবে এসে পড়ছে। এ কারণে নদীতে থাকা মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠেছে। কয়েকশ স্থানীয় লোকজন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীর কালো পানিতে নেমে মাছগুলো ধরছেন। সঙ্গে জেলেরাও মাছ ধরার চেষ্টা করছেন। এতে তুলসীগঙ্গা নদী পৌরসভার সোনামুখী সেতু থেকে হলহলিয়া রেল সেতু পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার এলাকা মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। তুলসীগঙ্গা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা উলিপুর গ্রামের আব্দুল মণ্ডল বলেন, ‘চিনিকলের বিষাক্ত পানি নদীতে আসায় সকল মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এতে মাছশূন্য হয়ে পড়েছে তুলসীগঙ্গা নদী। এখন থেকে তিন চার মাস নদীতে কোনো মাছ পাওয়া যাবে না।’

একই গ্রামের জেলে শরীফ বলেন, ‘আজ নদীতে মরা মাছ ধরছি। নদীর মাছ মরে যাওয়ায় রোজগারের পথ বন্ধ হলো। আমাদের অন্য বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করতে হবে।’ আক্কেলপুর উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোশফিকুর রহমান বলেন, ‘বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত পানি নদীতে প্রবেশের কারণে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় নদীর মাছ মরে ভেসে উঠছে। এতে কোনো জলজ প্রাণীই বাঁচতে পারবে না। আগামী তিন থেকে চার মাস নদী মাছশূন্য হয়ে যাবে। বর্ষাকালে নতুন পানি এলে আবার মাছ পাওয়া যাবে।’ এ বিষয়ে আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, দূষিত পানিতে মাছ ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দূষিত পানির বিষয়ে চিনিকল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত