ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস

সপ্তাহের ব্যবধানে ফুলের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ

সপ্তাহের ব্যবধানে ফুলের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবকে ঘিরে চলছে নানা প্রস্তুতি। এরপরেই আসছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই তিন দিবসেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে ব্যবহৃত হয় ফুল। এর মধ্যেই জমে উঠেছে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালীতে পাইকারি ফুলের বাজার। মূলত এই তিন দিবস ঘিরে জমে ওঠে গদখালি ফুলবাজার। অন্য সময় থেকে বেশি দামে ফুল বিক্রি হওয়ায় এ সময়ে ফুল গাছের বাড়তি যত্ন নেন কৃষক। সময় যত ঘনিয়ে আসছে পাইকারি বাজারে ফুলের দামও তত বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফুলের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ফুলচাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সামনের এই তিন দিবসে অন্তত ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। গতকাল ভোর থেকে জমজমাট কেনাবেচা শুরু হয়েছে এ বাজারে। এদিন অন্যান্য ফুলের তুলনায় বাজারে ভালোবাসার প্রতীক গোলাপ ফুলের পরিমাণ অনেক বেশি। কৃষকরা বলছেন, চলতি বছরে আবহাওয়াজনিত কারণে গোলাপের বাগানে ভাইরাসের আক্রমণ হয়। ফলে গোলাপ ফুলের উৎপাদন কম হওয়ায় চড়া দাম পাচ্ছেন। তবুও লোকসানের শঙ্কায় রয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারাদেশে গদখালীর ফুলের চাহিদা অনেক বেশি। তবে এবার গোলাপ ফুলের উৎপাদন কম এবং বাজারে আমদানি কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী গোলাপ ফুল সরবরাহ করতে পারছেন না তারা।

সরেজমিন গতকাল সকালে গদখালীর ফুলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ বাজারে গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ২৫-৩০ টাকা, চায়না গোলাপ প্রতি পিস ৪০ টাকা, গ্লাডিওলাস প্রতি পিস ১৭ থেকে ১৮ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ১৫-১৬ টাকা, রজনীগন্ধা ১৩-১৫, গাদা প্রতি হাজার ৩০০-৮০০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা প্রতি পিস ৩-৫ টাকা। ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে বেশিরভাগ বেপারীরা গোলাপ ফুলের কেনাবেচা নিয়ে বেশি ব্যস্ত রয়েছেন। নন্দির ডুমুরিয়া গ্রামের চাষি মো. শাহাবুদ্দিন সাইকেলে করে ৪০০ পিস গোলাপ ফুল নিয়ে এসেছেন গদখালির বাজারে। তিনি বলেন, আমি প্রায় এক বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছিলাম। কিন্তু ছত্রাক, ভাইরাসের আক্রমণে অধিকাংশ গাছে ফুল আসেনি। ফলে উৎপাদন কম হয়েছে। তবে যা উৎপাদন হয়েছে, বাজারে ভালোই দাম পাচ্ছি। নীলকণ্ঠ নগর গ্রামের চাষি মেহেদী হাসান বকুল বলেন, গোলাপ নিয়ে এসেছি ৫০০ পিস। বেপারীরা দাম বলেছে ২৫-৩০ টাকা। এতে আমরা সন্তুষ্ট। তবে ভাইরাস না লাগলে আমাদের উৎপাদন বেশি হতো। তানা হলে এক থেকে ২ হাজার গোলাপ ফুটতো আমার বাগানে। ঈশ্বরদীর থেকে গদখালীর বাজারে ফুল কিনতে এসেছে ব্যবসায়ী মো. জুয়েল। তিনি বলেন, আমি ২৫ বছর ধরে এ বাজার থেকে ফুল কিনে নিয়ে যাই। এতো কম ফুল কোনো দিন দেখিনি। অন্যান্য বছর গোলাপে বাজার লাল হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর ভাইরাস লাগায় বাজারে গোলাপের সংখ্যা কম। তবে দাম ভালো। গদখালী থেকে ফুল কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠান সেলিম রেজা। তিনি বলেন, গদখালীর ফুলের চাহিদা সারাদেশেই আছে। কিন্তু এবার ফুল কম আমরা চাহিদা মোতাবেক ফুল সরবরাহ করতে পারছি না। অনলাইনে দেশের বিভিন্ন জেলায় ফুল সরবরাহ করেন আল আমিন নামে এল কলেজছাত্র। তিনি বলেন, বিগত দুইদিন আগে থেকে ফুলের চাহিদা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে গোলাপের চাহিদা বেড়েছে। দামেও ভালো। আমরা অনলাইনে অর্ডার নিচ্ছি আর ফুল সরবরাহ করছি। যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি কৃষক নেতা আব্দুর রহিম বলেন, গদখালিতে এবার গোলাপ ফুলের সংখ্যা কম। তবে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছে। আগামী দুই তিনদিন ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে এমন চড়া দামে ফুল বিক্রি হলে তারা একটু ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারব। এ বছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমরা ধারণা করছি। ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, এ বছর ঝিকরগাছার ১৫০ হেক্টর জমিতে গোলাপের চাষ হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত