বিস্তীর্ণ ফসলের খেত, কাজ করছেন সব বয়সি নারী-পুরুষ। কেউ কুমড়ো, কেউ পেঁয়াজ, রসুন, গম, লাউ, আলু, ভুট্টা আর করলা চাষ করছেন। আছে ধানও। আকাশ মিতালি করেছে চরের সবুজের সঙ্গে। চরভর্তি ফসলই যেখানকার প্রধান পরিচয়। তিস্তা যেখানে নিজেকে মেলে রেখেছে কৃষকের জন্য। গল্পটা নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার তিস্তার চরের। শুষ্ক মৌসুমের মরা নদী তিস্তার চরে ফসলের হাসি দেখা যায়, যেখানকার কৃষকের মুখে। চরের জীবন, নদীর সঙ্গে যুদ্ধ। কিন্তু সে যুদ্ধে বিজয়ের হাসিটা চরবাসীরাই হাসতে চায়। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, তিস্তার চরে ২ হাজার ৯০৫ হেক্টর চরের জমি এখন আবাদ যোগ্য হয়েছে। চরের জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল চাষাবাদ এখন মধ্যম সময়ে রয়েছে। সরেজমিন ডিমলা উপজেলার তিস্তা ব্রিজ এলাকাসহ বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি চরেই কৃষকরা বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাক ডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চরে কাজ করেন কৃষক-কৃষানি। তিস্তা চরের বালু মাটি যেন সাদা সোনায় পরিণত হয়েছে তাদের জন্য। বর্তমানে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নদীভিত্তিক জীবিকা নির্বাহকারীরা পলি ও দোআঁশ মাটিতে চাষাবাদ করে নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করে তুলছেন। উপজেলার চর খড়িবাড়ী এলাকার কৃষক আব্দুর রহমান ও আব্দুর রউফ জানান, গত বছর মিষ্টি কুমড়ার দাম বেশি পাইনি। এবার আশা করছি ভালো দাম পাওয়ার। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন ভালো হবে। এই তিস্তা চরে আবাদ করে আমাদের নদীপাড়ের মানুষের সংসার চলে। চাষাবাদের জন্য তেমন কোনো জমি নেই আমাদের। তাই প্রতিবছর নদীতে চর জাগলে চাষাবাদ করি।’ খগা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের কিসামত ছাতনাই গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী ও জহুরুল হক বলেন, খরস্রোতা তিস্তায় জেগে ওঠা বালু চরের পলি ও দোআঁশ মাটিতে চাষ হচ্ছে আলু, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, মিষ্টি কুমড়াসহ নানান জাতের ফসল। ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তিস্তা সেতু এলাকায় চরের খেত পরিচর্যা করা কৃষক হুরমুজ আলী বলেন, চরে আলু, পিয়াজ ভুট্টা, মরিচ, লাউ চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করছি দামও ভালো পাব। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সেকেন্দার আলী জানান, ডিমলা উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় ২ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, পেয়াজ, রসূনসহ নানা জাতের ফসল চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চরের কৃষকদের কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতাসহ কৃষককে বিভিন্ন ধরনের সার দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হবে। তিনি আরো জানান, তিস্তার নদীর জেগে উঠা চরকে ঘিরে নদীপাড়ের মানুষের ভাগ্যের দুয়ার খুলেছে। চলতি মৌসুমে তারা সবজির বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ও দাম ভালো পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।