ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কাঁঠালিয়ার শৌলজালিয়া নিঝুম চরে পাখির অভয়াশ্রম

কাঁঠালিয়ার শৌলজালিয়া নিঝুম চরে পাখির অভয়াশ্রম

ঝালকাঠির জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়ন ও বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার মাঝখানে বিষখালী নদীতে রয়েছে বিশাল চর। এ চরে সবসময় পাতিহাঁস, টুনটুনি, বক, ময়না, টিয়া, ঘুঘু, পেঁচা, বুলবুলি, কাক, শালিক, বাবুই, চড়ুই, ডাহুক, বৈরী, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, বউ কথা কও, দোয়েল, কোকিল, কাঠঠোকরানি, চিল, হরিয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় পাখি থাকে।

কাঁঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চরের কাছে থাকায় ইউনিয়ন পরিষদ চরটি দেখভাল করছে। ৩০ বছর পরে স্থানীয় প্রশাসন এ চরটির নামকরণ করেছে ‘পাখির চর’ হিসেবে। প্রতিবছর শীতকালে এই চরে আশ্রয় নেয় বেশ কয়েক জাতের অতিথি পাখি। পাখিদের নিরাপদে বসবাস করার জন্য চরের বেড়ে ওঠা ছোট-বড় বিভিন্ন গাছে হাঁড়ি ঝুলানো হয়েছে।

কাঁঠালিয়া উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের থেকে জানা গেছে, কাঁঠালিয়ার দক্ষিণ শৌলজালিয়া মৌজার একশত তিন দশমিক তিন একর জমি পাখির অভয়ারণ্যের আওতায় থাকবে। প্রকৃতিকে সবুজ ও সুন্দর রাখতে ‘এসো পাখির বন্ধু হই’ এই স্লোগান সংবলিত একটি সাইনবোর্ড চরে লাগানো হয়েছে। এই চরে পাখি শিকার, মাটি কাটা, গাছকাটা, বালু উত্তোলন ও গরু-মহিষ চড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টার দিকে শৌলজালিয়া খেয়াঘাট বিষখালী নদীর বুকে জেগে উঠা মাঝের চর পাখির অভয়ারণ্য স্পিডবোটে পৌঁছে ও স্থলে পায়ে হেঁটে পরিদর্শন করেছেন ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. ওয়ালিউল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. আফরুজুল হক টুটুল। এ সময় কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নেছার উদ্দিন ও থানার ওসি মো. নাসির উদ্দিন সরকার, শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেন রিপন উপস্থিত ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝালকাঠির সুগন্ধা-গাবখান ও বিষখালী নদীর মোহনা থেকে বিষখালি নদীর উৎপত্তি হয়ে দক্ষিণে ২০৫ কিলোমিটারজুড়ে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে বিষখালী নদী, যার শেষ সিমানা বঙ্গোপসাগরে সঙ্গে রয়েছে।

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নে বিষখালী নদীতে রয়েছে বিশাল এই চর। চরটিকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করে সেখানে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে কাঁঠালিয়া উপজেলা প্রশাসন। চর ও পাখিদের সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং সঠিক তদারকির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে কাঁঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদকে। শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেন রিপন বলেন, বিষখালি নদীর এই চরকে প্রশাসনিকভাবে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণার প্রেক্ষিতে ‘পাখির চরদ ঘোষণা করে ৩ বছর আগে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে প্রয়োজনের তাগিদে কাঁঠালিয়া উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পাখির চর রক্ষণাবেক্ষণে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এবং সেই থেকেই সঠিকভাবে সংরক্ষণে সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছি। তিনি জানান, সাইনবোর্ডে নোটিশ হিসেবে লেখা রয়েছে মহিষ, গরু, ছাগল পালন করে ঘাস খাওয়ানো বা অন্য কোনো উদ্দেশে উক্ত চরে চড়াবেন না। মাটি, বালু, গাছ কেউ কাটবেন না। চরের চারপাশে কেউ মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে ঝাউ বা গাছের ডাল ফেলবেন না। উভয়ই আইনত অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ চর আপনার আমার সবার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। ‘চরটিকে আরো দৃষ্টিনন্দন করতে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, শিশুদের খেলার বোর্ডসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। শৌলজালিয়া ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে এ চরকে ‘শেখ রাসেল ইকোপার্ক- নামকরণ করে আরো সমৃদ্ধশালী করার দাবি জানান চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেন রিপন। কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নেছার উদ্দিন বলেন, ‘বিষখালী নদীর বুকে জেগে ওঠা বিশাল চর ৩০ বছর আগে এ নৈসর্গিক চরকে এখন পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। পাখিদের নিরাপদে বসবাস করার জন্য চরের বিভিন্ন গাছে হাঁড়ি ঝুলানো হয়েছে। এতে পাখির বংশবৃদ্ধি পেয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা হবে। প্রতিবছর শীতকালে এই চরে আশ্রয় নেয় অনেক জাতের প্রায় কয়েক শতাধিক অতিথি পাখি। চরটিকে আরো দৃষ্টিনন্দন করতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত