ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঐতিহ্যের ডাকবাক্স এখন অপ্রয়োজনীয় পড়ে থাকে অযত্ন-অবহেলায়

ঐতিহ্যের ডাকবাক্স এখন অপ্রয়োজনীয় পড়ে থাকে অযত্ন-অবহেলায়

কবিতার ভাষায় যতই বলুন, দেরি হোক যায়নি সময় তবে বাস্তবতা হলো সময় চলে গেছে। আবেগে লেখা দু’লাইন চিঠির দিন অনেক আগেই ফুরিয়েছে।

আমরা চলে এসেছি অনেক দূর, চিঠির যুগ ফেলে ইলেকট্রনিক বার্তার যুগে। এখন আর দিনের পর দিন মাসের পর মাস প্রিয় মানুষের গন্ধ মাখা লেখা চিঠির জন্য কেউ অপেক্ষার প্রহর গুনে না। এখন সেকেন্ডের ব্যবধানে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে টুংটাং আওয়াজ তুলে খুদে বার্তা পৌঁছে যায়। একসময় মানুষের যোগাযোগ কিংবা মনের ভাব আদান-প্রদানের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল ডাক বিভাগ। এর মাধ্যমে মানুষ প্রিয়জনের খোঁজ নিত। হলুদ রঙের পোস্টকার্ডে কিংবা সাদা কাগজে কালো অক্ষরে চিঠি লিখে হলুদ খামে ভরে লাল ডাকবাক্সে ফেলে পাঠানো হতো প্রিয়জনদের কাছে। ভিন্ন ধরনের অনুভূতি আর অনাবিল আনন্দে ভরপুর ছিল মায়াবী হাতের লেখা সেই চিঠিতে। প্রিয়জন থাকলেও এখন আর ডাকের মাধ্যমে দাওয়াত কিংবা খোঁজখবরের জন্য চিঠির প্রয়োজন হয় না। কারও বাড়ির সামনে এসে সাইকেলের বেল বাজিয়ে চিঠি চিঠি বলেও হাঁক ছাড়েন না ডাকপিয়ন। সময়ের পরিবর্তনে প্রযুক্তির দাপটে সেসব সোনালি দিনগুলোর স্মৃতিময় দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সেই হলুদ খাম আর লাল ডাকবাক্সের ব্যবহার। কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে এখনো কিছু ডাকবাক্স দেখা গেলেও সেগুলো ভাঙা ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। কোথাও আবার ময়লার ভাগাড়ের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় বিবর্ণ ডাক বাক্স। ডাকঘর আর ডাকবাক্সের এখন আর যৌবন নেই। মরিচায় ক্ষয়ে যাওয়া লাল রঙের ডাকবাক্সে তামাটে রং ধরেছে, মরিচা ধরেছে ডাকঘরের টিনের চালা ও বেড়াতে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা সাইফুল্লাহ তারেক অতুল বলেন, বিজ্ঞান দিন দিন উৎকর্ষিত হচ্ছে আর আবেগ পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে। চিঠির স্থান দখল করে নিয়েছে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপি, ফেসবুক কিংবা টেলিগ্রাম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইমেইল, এসএমএস ও নানা মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগ করা সম্ভব হওয়ায় সেদিকেই ঝুঁকেছে মানুষ। ডিজিটাল এ যুগে ডাকঘরের আবেদন দিনদিন ফিঁকে হয়ে যাচ্ছে। হয়তো আগামীর শিশুদের সঙ্গে ডাকবাক্সের দেখা হবে জাদুঘরে। কুমিল্লা প্রধান ডাকঘরের সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল মো. বেলাল হোসেন বলেন, এখন আর আগের মতো হাতে লেখা চিঠি আদান-প্রদান হয় না। বিশেষ করে বিদেশি চিঠির সংখ্যা খুবই কমে গেছে। তবে ডাক বিভাগকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পার্সেল আদান-প্রদান, মানি অর্ডার, সঞ্চয়পত্র, সরকারি ডকুমেন্ট, প্রাতিষ্ঠানিক কাগজপত্র, চাকরিসংক্রান্ত পরিষেবা লেনদেনে সীমিত জনবল নিয়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এখনো মানুষের আস্থার জায়গায় রয়েছে ডাক বিভাগ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত