ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফাগুন হাওয়ায় ফুলের আগুন দাম

ফাগুন হাওয়ায় ফুলের আগুন দাম

বসন্তকে রাঙাতে সারাদেশে বেড়েছে গাঁদা ফুলের কদর। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি গাঁদা ফুলের দামও বেড়েছে হু হু করে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই ফুলের দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে সাতগুণ পর্যন্ত। গদখালীর পাইকারি বাজারে গাঁদা ফুলের বাজার এখন জমজমাট। আজ পয়লা ফাল্গুন ও বসন্তবরণ উৎসব। এই উৎসব ঘিরে গাঁদা ফুলের চাহিদা বাড়ছে। গদখালীর ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এ ফুলের দাম আরো বাড়বে। গত সোমবার রেকর্ড দামে গদখালী বাজারে গাঁদা ফুল কেনাবেচা হয়েছে। প্রতি হাজার গাঁদা ফুল ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। গত সপ্তাহে সমপরিমাণ ফুল ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গাঁদা ফুলের এমন দামে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ভীষণ খুশি। একই দিনে গোলাপের রেকর্ড দাম থাকলেও গত দিনের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে। এদিন গোলাপ বিক্রি হয়েছে প্রতি পিস ২০-২৫ টাকা। অথচ গত রোববার গোলাপ বিক্রি হয়েছিল মানভেদে ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত। চায়না গোলাপের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। গত সোমবার সকালে যশোরের গদখালী ফুলের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কাকডাকা ভোর থেকেই কৃষকরা বড় বড় ঝুড়ি ও বস্তাভর্তি করে গাঁদা ফুল নিয়ে এসেছেন মোকামে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশের ফুলের আড়তে তারা গাঁদা বিক্রি করছেন। কেউ কেউ ভ্যানের ওপর থেকে নিজেরাই গাঁদা ফুল বিক্রি করছেন। একদিকে চলছে ফুলের বেচাকেনা, অন্যদিকে নারীরা সুই সুতো দিয়ে করছেন মালা গাঁথার কাজ। তাদের গাঁথা মালা বিভিন্ন পরিবহনে করে ঢাকাসহ দেশের জেলায় জেলায় পাঠানো হয়। এদিন গাঁদা ফুলের ভালো দাম পেয়ে অধিকাংশ কৃষকের মুখে চওড়া হাসি ফুটে ওঠে। কৃষকরা বলছেন, এবার গাঁদা ফুলের দাম আরও বাড়বে। হাড়িয়া গ্রামের গাঁদা ফুলচাষি বাবু জানান, গতকাল ভালো দামে গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে। তিনি হাজারপ্রতি ৪৫০ টাকা দরে চার হাজার ফুল বিক্রি করেছেন। পানিসারা গ্রামের কৃষক আরিফ হোসেন বলেন, সাড়ে ছয় হাজার গাঁদা নিয়ে হাটে এসেছি। প্রতি হাজার ফুল বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকা দরে। সপ্তাহখানেক আগে এই ফুল বিক্রি করেছি প্রতি হাজার ১৫০ টাকা দরে। বেনেয়ালি গ্রামের শহিদুল গাজী বলেন, ১০ হাজার গাঁদা ফুল নিয়ে এসেছি। প্রতিহাজার বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকায়। এসব ফুল ক্রেতারা বসন্ত উৎসবের জন্য কিনছেন। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে এই ফুলের দাম আরো বাড়বে। যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, এই অঞ্চলে অন্তত ৩০০ হেক্টর জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ হয়। বসন্তবরণ উৎসব ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে গাঁদা ফুলের চাহিদা বাড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গাঁদা ফুলের সর্বোচ্চ দাম থাকবে। এদিকে আড়তদারের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ব্যাপারীরা গাঁদা ফুল কিনে স্থানীয় নারীদের দিয়ে মালা তৈরি করিয়ে নেন। ওই মালা বস্তাভর্তি করে সারা দেশের খুচরা ফুলের দোকানে পাঠানো হয়। গদখালী বাজার লাগোয়া সদিরালী গ্রামের অন্তত ২০০ নারী বাড়ির আঙিনায় বসে গাঁদা ফুলের মালা গাঁথার কাজ করেন। প্রতিপিস মালা গাঁথা বাবদ তারা মজুরি নেন ২০ টাকা। এখন প্রতিদিন তারা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করছেন। সরেজমিন দেখা গেল, নুপুর বেগমের বাড়ির উঠান ও বারান্দায় মালা গাঁথার কাজ করছেন দীপা, সামসুন্নাহার, সুমাইয়া, তহুরন, কোহিনুরসহ অন্তত দশজন নারী। নুপুর বলেন, সংসার সন্তান সামাল দিয়ে আমরা গাঁদা ফুলের মালা গাঁথার কাজ করি। এখন কাজের চাপ অনেক বেশি। ব্যাপারীরা আমাদের কাছে ফুল ও সূতা দিয়ে যান। যে যত বেশি মালা গাঁথতে পারবে, সে ততো টাকা পাবে। দীপা বলেন, প্রতিটা মালার জন্য ব্যাপারীরা ২০ টাকা মজুরি দেন। এখন কাজের চাপ বেশি, প্রতিদিন ২০টা মালা গাঁথতে পারি। এখন ৪০০ টাকা আয় হচ্ছে। অপরদিকে গত সোমবার সকালে অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত গোলাপ বিক্রি না করে ফিরে গেছেন। অনেকেই কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে কম দামে বিক্রি করেছেন। তাদের অভিযোগ, ভারত থেকে আনা গোলাপের কারণে গত সোমবার কৃষকদের গোলাপ বিক্রি কম হয়েছে। হাড়িয়া নিমতলা গ্রামের কৃষক রাসেল হোসেন বলেন, গত সোমবার বাজারে প্রচুর পরিমাণ গোলাপ উঠেছে। আমরা গোলাপ বিক্রি না করতে পেরে বাড়িতে ফেরত এনেছি। তিনি দাবি করেন, এদিন বাজারে প্রচুর পরিমাণে ভারত থেকে আনা গোলাপ উঠেছে, এজন্য বিক্রি কমে গেছে। নীলকণ্ঠনগর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, অনেক চাষি তাদের গোলাপ বিক্রি করতে পারেনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত