গম উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা

প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ও আবহাওয়া গম চাষের উপযোগী। গত কয়েক মৌসুমে গমের বেশ ভালো ফলন হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ে। আবাদ ও উৎপাদনের দিক দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ গম উৎপাদনকারী জেলা ঠাকুরগাঁও। সরকারও এ জেলা থেকে সর্বাধিক গম কিনে থাকে। তবে এবারের চিত্রটি ভিন্ন। গমের থেকে ভুট্টার দাম বেশি পাওয়ায় এবার জেলায় কমেছে গমের আবাদ। জেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, জেলায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৭ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। চার বছরের মাথায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে খাদ্যশস্যটির আবাদি জমির পরিমাণ নামে ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টরে। এ থেকে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩২৮ টন গম উৎপাদন হয়। আর চলতি মৌসুমে (২০২৩-২৪) ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩২৮ টন। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর কমেছে গম আবাদ। কারণ এবার ভুট্টার ফলন ভালো। তাই গমের চেয়ে দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচটি উপজেলাতেই গমের ভালো ফলন হচ্ছে। তবে কৃষকেরা বলছেন, বাজারে গমের থেকে ভুট্টার দাম বেশি থাকায় সেদিকেই ঝুঁকছেন তারা। বিগত বছরগুলোর জরিপ দেখলেই বোঝা যায়, এ অঞ্চলে গমের চাষ প্রতি বছরই কমছে। এভাবে চলতে থাকলে গম উৎপাদনের এ হার অর্ধেকেরও নিচে নেমে যেতে পারে। দাম ভালো পাওয়ায় এবং ঝামেলা কম থাকায় জেলায় গমের চেয়ে ভুট্টা ও আলু বেশি উৎপান হচ্ছে। আলু ও ভুট্টার পাশাপাশি সরিষা চাষ করছেন কৃষক। সদর উপজেলার নারগুন গ্রামের কৃষক হোসেন আলী বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে গম উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ২২ থেকে ২৫ মণের বেশি গম পাওয়া যায় না। এতে লাভ কম হয়। তাই আলু উত্তোলনের পর পরই আগাম ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টাতে একই খরচে বেশি ফলন পাওয়া যায় এবং দামও পাই।’ বালিয়াডাঙ্গী এলাকার কৃষক আফজাল আলী বলেন, ‘যেসব জমি আগে গমে ভরে থাকত, সেসব জমিতে এখন ভুট্টাসহ অন্য ফসল ফলাচ্ছেন কৃষকরা। আমি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে গম আবাদ করছি। বীজ কিনতে যে ভোগান্তিতে পড়েছি আগামী বছর আর গম চাষের ইচ্ছে হবে না। সরকার গম বীজের মূল্য নির্ধারণ করেছিল ৫৮ টাকা। কিন্তু সেই বীজ আমাকে ডিলারদের কাছে কিনতে হয়েছে ৭৯-৭৫ টাকায়। তারপরেও বীজ পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সহজভাবে বললে আমরা কৃষকরা কোনো কিছুই পাই না।’ এদিকে গমের চাষ ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার কারণে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির শঙ্কা দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, গমের চাষ কমে গেলে দেশকে গমে আমদানিনির্ভর হয়ে যেতে হবে। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে। ভুট্টা থেকে বেশিরভাগ গবাদিপশুর খাদ্য উৎপাদন হয় আর গম থেকে মানুষের খাদ্য উৎপাদন হয়। তাই গম চাষে চাষিদের প্রণোদনাসহ এই ফসলটির আবাদ বৃদ্ধিতে নানাবিধ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি মনে করেন তারা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গমের চাষ কমেছে ঠাকুরগাঁওয়ে। যেসব জমিতে গম উৎপাদন হতো সেখানে এখন সরিষা ও ভুট্টার চাষ হচ্ছে। জমি ফাঁকা নেই। সরিষার পরে কৃষকরা বোরো ধান আবাদ করবেন। কৃষকরা তাদের জমি ফাঁকা রাখছেন না। কৃষকরা তাদের জমিতে যে ফসলের আবাদই করুক না কেন আমাদের সহযোগিতা থাকবে। তারপরও ঠাকুরগাঁও জেলা গম উৎপাদনে দেশসেরা।