ঢাকা ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঐতিহাসিক পোড়াদহ মেলার আকর্ষণ ‘পাখি মাছ’

ঐতিহাসিক পোড়াদহ মেলার আকর্ষণ ‘পাখি মাছ’

প্রতি বছর মেলার আকর্ষণ থাকত বড় বড় বাঘাইড় মাছ। কিন্তু বিগত দুই বছর ধরে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বাঘাইড় মাছ বিক্রি ও প্রদর্শন বন্ধের নোটিশ দেওয়ায় এবার মেলায় ওঠেনি মাছটি। তবে সেই স্থান দখল করেছে বিশাল আকারের পাখি মাছ। প্রায় ১ মণ ওজনের পাখি মাছ উঠেছিল বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায়। শুধু পাখি মাছই নয়, ২৫ কেজি ওজনের ব্ল্যাক কার্প, ২০ কেজি ওজনের কাতলাসহ রুই, মৃগেল, চিতল, বোয়াল, আইড়, হাঙড়ি, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালিবাউশ, শোল, ভেউস ও পাঙ্গাস মাছ উঠেছে এই মেলায়। গত বুধবার ভোর হতে মেলায় কেনাকাটা শুরু হয়। তবে গত মঙ্গলবার রাত থেকেই মেলায় মাছ উঠতে শুরু করে। বগুড়া গাবতলী উপজেলার পোড়াদহ মেলা প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী। ওই এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, প্রায় ২০০ বছর আগে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নে ইছামতি নদীর শাখা (খাল) সংলগ্ন পোড়াদহ নামক স্থানে একটি বটবৃক্ষ তলে আয়োজন করা হতো সন্ন্যাসী মেলা। প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার আয়োজিত এই মেলা কালের বিবর্তনে হয়ে ওঠে পূর্ব বগুড়ার বাসিন্দাদের মিলনমেলা। নদী তীরবর্তী স্থানে এই মেলায় নানা প্রজাতির মাছের আমদানি হতে শুরু করে। এক সময় তা এই অঞ্চলে বড় মাছের মেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ইছামতির খালের পশ্চিমপাশে মাঠের আয়োজন করা হয় এই মেলার। মেলা উপলক্ষ্যে সেখানকার বাসিন্দাদের রেওয়াজ হয়ে উঠেছে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো। মেলায় শিশু-কিশোরদের জন্য নাগরদোলা, সার্কাস, মোটরসাইকেল খেলা, বিভিন্ন প্রকার খেলনার দোকান বসে। মেলার একপাশে বসে গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিশেষ করে মশলাপাতির দোকান। অপরপাশে বসে কাঠের আসবাবপত্রের দোকান। প্রতিবারের ন্যায় এবারও মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল মাছপট্টিতে। প্রতিটি দোকানে বড়, মাঝারি ও ছোট বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সাজান দোকানিরা। মেলায় আকৃতিভেদে প্রতি কেজি রুই বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতলা ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, মৃগেল ২৫০ থেকে ৪০০, চিতল ৫০০ থেকে ৭০০, বোয়াল ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০, হাঙরি ২০০ থেকে ৪০০, গ্রাসকার্প ২৫০ থেকে ৪০০, সিলভার কার্প ও বিগহেড ৩৫০ থেকে ৪০০, কালিবাউশ ৩০০ থেকে ৪০০, শোল ৪০০ থেকে ৫৫০ ও পাঙ্গাস ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। বিগত বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম কিছুটা বেশি বলে জানান ক্রেতারা। মহিষাবান সার্বজনীন সন্ন্যাসী পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি নিকুঞ্জ কুমার পাল জানান, এই মেলার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল সন্ন্যাসী পূজা। সেটাই ছিল মূলত ঐতিহ্য। কিন্তু বর্তামানে জায়গা নিয়ে জটিলতা ও মেলা উদযাপন কমিটির সমন্বয়হীনতার কারণে মেলার সেই ঐতিহ্য হারাতে বসছে। এখন মেলাকেন্দ্রিক কেনাকাটাই মূখ্য হয়ে উঠেছে। পোড়াদহ মেলার আয়োজক ও মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, মেলার যে ঐতিহ্য তা টিকিয়ে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়েছে। মানুষ তাদের প্রাণের টানেই মেলায় আসে। আর আশপাশের গ্রামগুলো আত্মীয়-স্বজনে মিলনমেলায় পরিণত হয়। ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, মেলা প্রাঙ্গণের পূর্বপ্রান্তে রাস্তা ঘেঁষে ১২টি বড় আড়ত বসেছে। ভোর থেকে মেলায় আসা বিভিন্ন এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী এসব আড়ত থেকে মাছ কিনে মেলায় বিক্রি করছেন। গাবতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, মেলা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। গ্রামীণ এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আগামীতেও প্রশাসন সহযোগিতা দিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত