ঢাকা ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে শ্রীপুর তুলা

গবেষণা খামার বদ্ধপরিকর
উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে শ্রীপুর তুলা

তুলা এবং বস্ত্র উৎপাদনে বাংলাদেশের গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। তুলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের সভ্যতা ও অর্থনীতি। এটি আমাদের দ্বিতীয় মৌলিক চাহিদা, বস্ত্রের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বস্ত্র খাতের অবদান অপরিসীম। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ ভাগ অর্জিত হয় বস্ত্রখাত থেকে যার প্রধান কাঁচামাল তুলা। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বস্ত্রকলের কাঁচামাল যোগানের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর তুলা উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশে তুলা চাষ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সাল থেকে মাঠ পর্যায়ে তুলা সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত উচ্চ ফলন লাভে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হয়। সে প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে তুলা ফসলের গবেষণা ও সম্প্রসারণে ১৯৮৪ সাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে গাজীপুরের শ্রীপুর তুলা গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজ বর্ধন খামার। দেশে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে পাঁচটি গবেষণাকেন্দ্রের মধ্যে এটি একটি। প্রতিষ্ঠানটি তুলা কৃষকদের সহায়তায় উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বদ্ধপরিকর। আধুনিক ও স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জেনেটিক্স ও প্ল্যান্ট ব্রিডিং এগ্রোনমি, সয়েল সাইন্স, এন্টোমলজি, প্যাথলজি বিভাগের আওতায় লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি তুলা ফসলের তুলনামূলক স্বল্পমেয়াদি সিডিবি তুলা এমওয়ানসহ প্রায় ৯টি জাত অত্র খামার হতে উদ্ভাবিত। এছাড়া তুলা উৎপাদন সংক্রান্ত আধুনিক কলাকৌশল, সুষম সার ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব বালাই ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে চলমানা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রীপুর পৌরসভার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে পুরাতন বাজার এলাকায় ১৯৮৪ সালে ১২৭.৫ হেক্টর জমি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘তুলা গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজ বর্ধন খামার।’ গবেষণা কেন্দ্রটিতে তিন ক্যাটাগরির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদসহ মোট ৩৯ জনবল থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১৭ জন। গবেষণাগারে আছে বহুমুখী সংকট। গবেষণা পরিচালনার জন্য কেন্দ্রটিতে পাঁচজন গবেষক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছে মাত্র দুইজন। শ্রীপুর তুলা উন্নয়ন ও বীজ বর্ধন খামারের কটন এগ্রোনোমিস্ট কৃষিবিদ মো. আব্দুল ওয়াহাব আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় শ্রীপুর তুলা গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজ বর্ধন খামারের গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে জনবল ও বিজ্ঞানী সংকট থাকা সত্ত্বেও উচ্চফলনশীল, বালাইসহনশীল জাত উদ্ভাবন, হাইব্রিড বীজ উৎপাদন, তুলার স্বল্পমেয়াদি জাত উদ্ভাবন, উন্নত মসলিন তুলার জাত নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তুলার বিধ্বংসী পোকা বোলওযার্ম প্রতিরোধী ২টি বিটি তুলার জাতের প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে যা ২য় জিএমও ফসল হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিটি তুলা বোলওয়ার্ম প্রতিরোধী হওয়ায় রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের হার কম হবে যা একদিকে পরিবেশবান্ধব, অপরদিকে তুলার উৎপাদন খরচ কমাবে। এছাড়া হেক্টর প্রতি বিটি তুলার গড় ফলন ৪-৪.৫ টন। বিটি তুলাচাষে বোলওয়ার্ম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় ১২-১৫ শতাংশ কমবে এবং উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ বাড়বে। বিটি তুলাচাষে পরিবেশগতও কৃষকের স্বাস্থ্যগত কোন ঝুঁকি নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত