ঢাকা ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কেশবপুরে কাটা হচ্ছে জীবিত গাছ

কেশবপুরে কাটা হচ্ছে জীবিত গাছ

যশোরের কেশবপুরে বিভিন্ন সড়কের দুইপাশে মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণের পাশাপাশি ঠিকাদারের লোকজন জীবিত এবং ভালো গাছও কেটে নিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত দুই দিনে উপজেলার সাগরদাঁড়ি সড়কের বাগদা ঈদগাহ থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত ছয়টি গাছকাটার কথা থাকলেও জীবিতসহ অন্তত ৪০টি গাছ কেটে ফেলা হয়। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার লোকজন বাধা দিলে ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে বাগবিতন্ডা হয়।

দরপত্রবহির্ভূত কেটে ফেলা এসব গাছ সড়কের পাশে ফেলে রাখলেও পরে গোপনে সেগুলো জেলা পরিষদের সাইনবোর্ড লাগানো গাড়িতে করে নিয়ে যান ঠিকাদারের লোকজন। উপজেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খসড়া তালিকা অনুযায়ী উপজেলার বিভিন্ন সড়কে মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ রয়েছে ১৯৫টি। এর মধ্যে উপজেলার কেশবপুর-সাগরদাঁড়ি সড়কে ২১টি, হাসানপুর-বগা সড়কে ৫৭টি, কেশবপুর-কলাগাছি সড়কের দুই পাশে ২১টি, চুকনগর-সন্ন্যাসগাছা ও ভেরচি-কলাগাছি বাজার সড়কে ৮৯টি, সন্ন্যাসগাছা-ভরতভায়না সড়কে ৭টি গাছ মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এসব গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দিলে জেলা পরিষদ দরপত্রের মাধ্যমে রহমানিয়া এন্টারপ্রাইজকে গাছগুলো কাটার আদেশ দেয়। কেশবপুর-সাগরদাঁড়ি সড়কের দেউলি এলাকায় গেলে দেখা যায়, সড়কের পাশের অসংখ্য মরা গাছের সঙ্গে জীবিত গাছও কেটে রাখা হয়েছে। এ সময় সেখানে উপস্থিত মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, সড়কের পাশে জেলা পরিষদ ও বন বিভাগের গাছ রয়েছে। বন বিভাগের গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের নিয়ে দল গঠন করা হয়। বন বিভাগ তাদের গাছ বিক্রির পর ৪০ শতাংশ টাকা দলভুক্ত কৃষকদের দিয়ে থাকে। কিন্তু সোম ও মঙ্গলবার বাগদা ঈদগাহ থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত জেলা পরিষদের দরপত্রের ৬টি গাছের পরিবর্তে অন্তত ৪০টি গাছ কেটে ফেলেন। প্রতাপপুর গ্রামের বাসিন্দা আতিয়ার গাজী বলেন, ‘রেইনট্রি- মেহগনিসহ বিভিন্ন গাছ কাটার সময় সড়কের পাশের খেতে পড়ে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় আমি প্রতিবাদ করলে ইয়াসিন নামে ঠিকাদারের এক ব্যক্তি করাত নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকার লোকজনের ভেতর এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে।’

গাছকাটার দায়িত্বে থাকা ইয়াসিন পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি জানান, তিনি ঠিকাদারের লোক। যে গাছ তারা কিনেছেন, সেগুলো কাটা হচ্ছে। বাদবাকি কথা থাকলে ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।

উপজেলা বন কর্মকর্তা হাবিবুজ্জামান বলেন, ‘খসড়া তালিকা অনুযায়ী উপজেলার বিভিন্ন সড়কে জেলা পরিষদের মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ রয়েছে ১৯৫টি। এসব গাছের মূল্য নির্ধারণ করে জেলা পরিষদে পাঠানো হয়েছিল। কেশবপুর-সাগরদাঁড়ির ওই সড়কের পাশের গাছকাটার সময় অফিস থেকে লোক পাঠিয়েছিলাম, ঠিকাদারের লোকজন কতটি গাছ কাটতে পারবে তার ওয়ার্ক অর্ডার বা সংখ্যা দেখাতে পারেনি। তারা (ঠিকাদারের লোকজন) বেশি গাছপালা কেটে ফেলছেন।’

যশোর জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার আল আমিন বলেন, কেশবপুর-সাগরদাঁড়ি সড়কে মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ ২১টি গাছ কাটার দরপত্র হয়েছে। এ গাছ কাটার দরপত্র পেয়েছেন রহমানিয়া এন্টারপ্রাইজ।

রহমানিয়া এন্টারপ্রাইজের পক্ষে গাছকাটার দায়িত্বে থাকা হারুনার রশিদ বলেন, মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলোই অপসারণ করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের হাবিবুর রহমান যে গাছগুলো দেখিয়ে দিচ্ছেন, সেগুলো কাটা হচ্ছে। কোনো জীবিত গাছকাটা হচ্ছে না।

যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, দরপত্রের বাইরে কোনো গাছকাটা হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত