অস্তিত্ব হারাচ্ছে রাখাইন ভাষা

বর্ণমালা থাকলেও নেই পাঠ্যপুস্তক

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

অতীত অনেক জৌলুশে থাকলেও সময়ের বিবর্তনে এখন কোণঠাসা হয়ে আছে কুয়াকাটার অলংকার খ্যাত রাখাইন গোষ্ঠী। নিজস্ব বর্ণ শেখার কোনো স্কুল না থাকায় অস্তিত্ব হারাচ্ছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্ণমালা শেখা।

নিজেদের ভাষার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আকুতি জানিয়ে স্থানীয় খানাবাদ ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ওয়েনাইচু বলেন, আমরা বাধ্য হয়েই বাংলা ভাষা শিখছি। আমরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে যে ভাষা ব্যবহার করি তা কিন্তু লিখতে পারি না। স্কুল কলেজে গিয়ে বাংলা শিখছি; কিন্তু আমরা হারাতে বসেছি আমাদের নিজস্ব পরিচয়, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি। প্রত্যেক জাতির কিংবা গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে তৈরি করা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাখাইন সম্প্রদায় এ জনপদের আদি বাসিন্দা হলেও আজ পর্যন্ত তারা তৈরি করতে পারেনি তাদের নিজস্ব ভাষার স্কুল। এই ভাষায় বর্ণমালা থাকলেও পাঠ্যপুস্তক না থাকায় দিন দিন কমে যাচ্ছে এর চর্চা। কিছু কিছু বৌদ্ধ বিহারে নিজস্ব উদ্যোগে পাঠ্যবই তৈরি করে শিশুদের শেখানো হলেও নেই কোনো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ। স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে এগিয়ে আসেনি কেউই।

শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের ঠাকুর (ভান্তে) ইন্দ্রবংশ বলেন, আমরা সকালে এখানে নিজস্ব ভাষার বর্ণমালা ও বার্মা ভাষায় লেখা কিছু বর্ণমালা শেখানোর চেষ্টা করি। এটি শুধু মন্দিরভিত্তিক না হয়ে আরো বড় পরিসরে হলে ভালো হয়। তাহলে এ বর্ণ টিকে থাকত প্রজন্মের মধ্যে। আমরা চাই নিজস্ব একটি স্কুল থাকুক।

সরকার দেখভাল করুক। শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের ছাত্র মংমংশ বলেন, এক সময় আমরা নিজ উদ্যোগে মন্দিরে এ বর্ণমালা শিখতাম। এখন শেখার ব্যবস্থা নেই, তাই শিখছি না। তবে প্রতিষ্ঠান থাকলে রেগুলার শিখতে পারতাম। মুসুল্লিয়াবাদ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক মো. সাইদুর রহমান বলেন, প্রতিটি জাতির নিজস্ব ভাষায় স্কুল থাকা প্রয়োজন। স্থানীয় রাখাইনদের বর্ণমালা বাঁচিয়ে রাখতে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করছি। রাখাইন নেত্রী ও বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের প্রেসিডেন্ট নিউ খেইন বলেন, আমরা টিকে থাকার জন্য বাধ্য হয়েই বাংলা ভাষা শিখছি।

আমাদের নিজস্ব বর্ণমালা শেখানো হবে এমন একটি স্কুল চাই।

যেখানে মনের আনন্দে আমাদের সন্তানরা নিজ প্রাণের বর্ণ শিখতে পারবে। কেরানিপাড়ার উঁচে মাদবর জানান, একটা সময় আমরা এ পাড়ায় নিজ উদ্যোগে বর্ণমালা শেখাতাম; কিন্তু যিনি শেখাবেন তাকে বেতন না দিতে পারা, বই না পাওয়া, জায়গা না পাওয়া সব মিলিয়ে নানা সমস্যায় বন্ধ হয় বর্ণ শেখানোর কাজ। কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, রাখাইন সম্প্রদায় নিজেরা উদ্যোগ গ্রহণ করলে আমরা যথাযথভাবে সাহায্য করব। তাদের নিজস্ব বর্ণ শেখার একটা প্রতিষ্ঠান করার চেষ্টা করা হবে ভবিষ্যতে।