ঢাকা ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নওগাঁর মান্দায় ব্রিজ থাকলেও নেই সংযোগ সড়ক

নওগাঁর মান্দায় ব্রিজ থাকলেও নেই সংযোগ সড়ক

নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার এলাকায় আত্রাই নদের ওপর ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও নেই সংযোগ সড়ক। স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো (চাঁটাই) তৈরি করে কোনো রকম যাতায়াত করছেন। একপ্রকার ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় উপজেলার ছয় ইউনিয়নের মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করে ব্রিজটি চালু করার দাবি এলাকাবাসীর। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, মান্দা উপজেলার জোতবাজার খেয়াঘাটে আত্রাই নদের ওপর ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল ব্রিজ নির্মাণ শুরু হয়। যার দৈর্ঘ্য ২১৭ মিটার এবং প্রস্থ ৭ দশমিক ৩২ মিটার। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৮ কোটি ৮১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। নির্মাণকাজ ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৫ বছর ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সেতুটির মুল কাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিলন ট্রেডার্স। একই প্রতিষ্ঠান সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য চুক্তিবদ্ধ থাকলেও নির্মাণসামগ্রির দাম বাড়ার অজুহাতে সংযোগ সড়ক না করে কাজ গুটিয়ে নেয়। মান্দা উপজেলা ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। বৃহৎ এ উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। যার দূরত্ব প্রায় ২৮ কিলোমিটার (জেলার আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন থেকে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার সফাপুর ইউনিয়ন)। এ নদীর ওপর মান্দা উপজেলার ফেরিঘাট নামক স্থানে নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি ব্রিজ আছে। আত্রাই নদীতে আত্রাই উপজেলার বান্দায়খাড়া একটি এবং মান্দা উপজেলার ফেরিঘাটে একটি ব্রিজ। এ দুই ব্রিজের মাঝের দূরত্ব প্রায় ২১ কিলোমিটার। তবে এ নদীতে ফেরিঘাট থেকে ৭ কিলোমিটার পূর্ব দিকে জোতবাজার খেয়াঘাটে ব্রিজ নির্মাণ হয়। এলাকাবাসীর ছিল দীর্ঘদিনের দাবি এবং স্বপ্ন ছিল জোতবাজারে একটি ব্রিজ হবে, যা দিয়ে ছয় ইউনিয়নের অন্তত শতাধিক গ্রামের মানুষ চলাচল করবে। কিন্তু ৫ বছর ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। বলা যায়, ব্রিজ নির্মাণকাজ গত দেড় বছর আগে শেষ হয়েছে। তবে ব্রিজের দুই পাশে নেই সংযোগ সড়ক। স্থানীয়দের উদ্যোগে ব্রিজের উত্তর পাশে বাঁশের সাঁকো দিয়ে সংযোগ করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এই ব্রিজ দিয়ে কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল নিয়ে, আবার কেউ ভ্যান নিয়ে পারাপার হচ্ছে। ভ্যান ঠ্যালা দিয়ে ব্রিজের ওপর উঠাতে হচ্ছে। উপজেলার প্রসাদপুর, মৈনম, নুরুল্যাবাদ, বিষ্ণপুর, কালিকাপুর ও গণেশপুর ইউনিয়ন ছাড়াও নওগাঁ সদর উপজেলার মানুষও চলাচলে সুবিধা পাবে। ব্রিজের দক্ষিণ পাশে রয়েছে জোতবাজার। যেখানে জোতবাজার আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, নূরুল্লাবাদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, জোতবাজার মহিলা কলেজ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর নদীর উত্তর পাশের শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। নদী পারাপারে স্কুলে পৌঁছতে অনেক সময় ক্লাসে দেরি হয়ে হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের। এছাড়া কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রির জন্য এ হাটে নিয়ে আসেন। বর্ষা মৌসুমে নদী পারাপারে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো তাদের পারাপারে একমাত্র ভরসা। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাতে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। জোতবাজার আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোস্তাফিয়া আল নিহা জানায়, নদী পার হয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয়। বর্ষায় নৌকা করে আসতে হয়। এ সময় ভয়ও লাগত। আবার অনেক সময় স্কুলে আসতে দেরিও হয়। ব্রিজের কাজ শেষ হলে ভ্যানে করে সহজেই স্কুলে আসা যেত। এ স্কুলের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, আমাদের স্কুলের প্রায় ৪৫০ শিক্ষার্থী। এরই মধ্যে নদী পার হয়ে প্রায় ১৫০ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থী ছাড়াও কয়েক শিক্ষক নদী পার হয়ে এ স্কুলে আসে। বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা ভয়ে নদী পার হয়ে স্কুলে আসতে চাই না। কয়েকবার নৌকাডুবির ঘটনাও ঘটেছে। শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পার হওয়ার সময় একজন শিক্ষক পড়ে গিয়ে আহত হয়। আমরা চাই দ্রুত সমস্যা সমাধান করে ব্রিজের কাজ শেষ করে চলাচলের উপযোগী করা হোক। নদীর উত্তর পাশে পার-নুরুল্যাবাদ গ্রামের বাসীন্দা রিপন হোসেন বলেন, নদীর দক্ষিণ পাশে জোতবাজার। আমরা যে কৃষিপণ্য উৎপাদন করি তা সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারি না। বর্ষা মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি হলে নৌকা করে নদী পার হওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এ কারণে ফলের ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। ব্রিজের কাজ শেষ হলে মানুষ পারপারা সহজ হওয়ায় সহ জীবনমানের অনেক উন্নয়ন হবে। নুরুল্যাবাদ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আহসান হাবিব বলেন, জোতবাজার খেয়াঘাটে একটি ব্রিজ হবে যা মান্দাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্রিজ নির্মাণ হয়। কিন্তু সংযোগ সড়ক নাই। এ ব্রিজ দিয়ে শতাধিক গ্রামের মানুষ চলাচল করতে পারবে। সংযোগ সড়ক না থাকায় গত দেড় বছর থেকে বাঁশের সাঁকো ব্রিজের সাথে সংযোগ করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এর সমাধান হওয়া দরকার। নওগাঁ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ব্রিজের নির্মাণকাজ কয়েক দফা পিছিয়ে যায়। অবশেষে চুক্তিকৃত ঠিকারদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করবে না বলে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়। পূর্বের চুক্তি বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার (দরপত্র আহ্বান) করা হবে বলে জানান এ প্রকৌশলী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত