রাজহাঁসের সঙ্গে লিটনের বন্ধুত্ব

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জয়পুরহাট প্রতিনিধি

বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তার দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন লিটন হোসেন। কিছুক্ষণ পর আবার মাঠের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। আর তার পেছনে পেছনে ছুটছিল একটি রাজহাঁস। লিটন দাঁড়িয়ে গেলে হাঁসটিও থেমে যায়। অনেক লোকের ভিড়েও মালিক লিটনকে খুঁজে নেয় রাজহাঁসটি। দেখে যে কারো মনে হতে পারে হাঁসটিকে জাদু করেছেন লিটন হোসেন। তবে না, মালিককে ভালোবেসেই পিছু পিছু ছুটে চলে হাঁসটি। লিটন হোসেন জানান, এক বছর আগে ১ হাজার ২০০ টাকায় এক প্রতিবেশীর কাছে ৪টি রাজহাঁসের বাচ্চা কিনেছিলেন। একটি বাচ্চা মারা গেছে। আর একটি গাবড়া খেয়েছে। দুটি রাজহাঁসের মধ্যে নিজেরা একটি জবাই করে খেয়েছেন। আর একটি রাজহাঁস ছিল। সেটিকে নিয়মিত খাবার দিতেন তিনি। সেখান থেকেই তার সঙ্গে রাজহাঁসের সখ্যতা গড়ে ওঠে। বিগত ছয় মাস ধরে যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই রাজহাঁসও তার পেছনে পেছনে চলে যায়। মানুষ আর রাজহাঁসের এমন মিতালির দেখা মিলবে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়নের আটুল মধ্যপাড়া গ্রামে। ওই গ্রামের লিটন হোসেন পেশায় একজন কৃষক। তিনি এক ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের পিতা। নিয়মিত রাজহাঁসটির খাবার দিতে দিতে সখ্যতা গড়ে ওঠে তার সঙ্গে। মানুষ আর রাজহাঁসের এমন সখ্যতা দেখতে এখন প্রতিদিনই লোকজন আসছেন লিটনের বাড়িতে। লিটন হোসেন বলেন, অনেক চেষ্টা করেও রাজহাঁসটিকে পিছু ছাড়াতে পারিনি। বাজারে গেলে আমার পেছনে পেছনে রাজহাঁস চলে যায়। মাঠে গেলে সেখানেও যায়। সবসময় পিছু লেগেই থাকে। যখন দূরে কোথাও যাই, তখন রাজহাঁসটিকে বেঁধে রাখি। বাড়িতে আসার পর আমার কথা শোনার পর সাড়া দেয়। একারণে রাজহাঁসের মায়ায় পড়েছি। রাজহাঁসটি কয়েক বার জবাই করে খাওয়ার উদ্যত হয়েও জবাই করতে পারিনি। এখন ভাবছি রাজহাঁসটিকে কাছেই রেখে দেবো। এখন রাজহাঁসটিকে দেখতে লোকজন আমার বাড়িতে আসে। গতকাল দুপুরে লিটনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়ির সামনে কয়েকজন মানুষ জড়ো হয়েছেন। লিটন বাড়ির দরজা খুলে বাহিরে আসেন। কিছুক্ষণ পর একটি রাজহাঁস বাড়ি থেকে বের হয়। লিটন হোসেন রাস্তা ও মাঠের দিকে যাচ্ছিলেন। রাজহাঁসটিও তাকে অনুসরণ করে পেছনে পেছনে যাচ্ছিল। তিনি মাঠ থেকে বাড়িতে ফিরেছিলেন। রাজহাঁসটিও আবার পিছনে-পিছনে আসছিল। একজন ব্যক্তি পরীক্ষা করতে রাজহাঁসটিকে খাবার দিয়ে তার দিকে ডাকছিলেন। কিন্তু রাজহাঁসটি তার মালিক লিটন হোসেন দিকেই ছুটে চলছে। লিটন হোসেনের স্ত্রী ছোবেদা খাতুন বলেন, আমরা পরিবারের সবাই রাজহাঁসটিকে খাবার দিই। কিন্তু রাজহাঁসটি আমাদের কাছে আসে না। আমার স্বামী যেখানে যায় রাজহাঁসটিও পিছনে-পিছনে চলে যায়। এতে সাংসারিক কাজের কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। তারপরও রাজহাঁসের এমন আচরণে আমরা সবাই মুগ্ধ। প্রতিবেশী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই লিটন ভাইয়ের পিছে পিছে রাজহাঁসটিকে যেতে দেখছি। বাজার করতে গেলে সেখানেও যায়। মাঠে গেলে সেখানেও যায়। এতে আমাদের ভালোই লাগে। আরেক প্রতিবেশী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা অনেক পরীক্ষা করে দেখেছি আসলেই রাজহাঁসটি তার মালিক চেনে। ভিড়ের মধ্যে রাজহাঁসটি লিটনকে চেনে পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। সেখান থেকে লিটন চলে গেলে রাজহাঁসটিও পেছনে পেছনে চলে যায়। সবসময় তার পেছনে পেছনে ঘোরাফেরা করছে।