ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গ্রামীণ সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যান

গ্রামীণ সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যান

নওগাঁর রানীনগরের গ্রামীণ সড়কগুলোয় দেদারছে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যান ট্রাক্টর। ফলে বিভিন্ন সময় ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। এছাড়া নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। একটু অসাবধানতা হলেই ঘটতে পারে যে কোনো দুর্ঘটনা। বিশেষ করে মোটরসাইকেল আরোহীর দুর্ভোগ চরমে। ট্রাক্টর মূলত জমিতে ধানচাষ ও প্রধান সড়কে মালামাল বহনের জন্য ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এ ছাড়া ছোটদের হাতেও তুলে দেওয়া হচ্ছে এই অবৈধ যানের স্টেয়ারিং। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো গ্রামে চলছে নতুন ও পুরাতন পুকুর খনন। সেই খননের মাটি বহন করা হচ্ছে ৬-৮ চাকার ট্রাক্টর দিয়ে। আর দিন-রাত ট্রাক্টরের চলাচলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ জনপদের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। এছাড়া ইট বিছানো ও পাকা সড়কের ওপর পড়ে থাকা মাটির আস্তরণে ঘটা দুর্ঘটনায় কেউ মৃত্যুবরণ করছে আবার কেউ স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। চলমান এমন কর্মকাণ্ডে নীরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। ফেব্রুয়ারি মাস মাটি খননের মৌসুম হওয়ায় বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে পুকুর খননের মাটি বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে এই যান। ফলে স্থায়ীভাবে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা ও সড়কগুলো। প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়কগুলোয় শত শত এই যান দাপিয়ে বেড়ালেও নজর নেই প্রশাসনের। নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে প্রতিটি ট্রাককে মাটি পরিবহনে ৩০০-৪০০ টাকা করে প্রদান করা হয়। ফলে এত কম টাকায় মাটি বহনের সুবিধা পাওয়ায় খননকারীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাড়া করে আনে ট্রাক ও ডাম্প ট্রাক। স্থানীয় বাসিন্দারা যখন অভিযোগ দেয় তখন লোক-দেখানো দুয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পুকুর খননে ব্যবহৃত ভেকু মেশিন এবং খননকারীর বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড করা হলেও আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে এসব অবৈধ যানগুলো। প্রতিটি ভেকু মেশিন ও ট্রাক্টরের মালিকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ মাসোহারা নেওয়ার কারণে প্রশাসন হাতের নাগালের মধ্যে পেয়েও এই যানগুলোর বিরুদ্ধে তেমন একটা শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না বলে জানা গেছে। এ ছাড়া প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত করে তারা এসব কর্মকাণ্ড করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে মাটিবাহী ট্রাক্টর যেসব স্থানে বেশি মাটি বহন করেছে, সেখানকার অবস্থা ভয়াবহ। উপজেলার গোনা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস মন্ডল জানান, অনেকেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নির্দিষ্ট লোকদের সঙ্গে আঁতাত করে অনেকেই নিজেদের ইচ্ছামাফিক ফসলি জমি মাটি দিয়ে পূরণ করছেন। অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমি পূরণ করায় পানি চলাচলের পথ নষ্ট হওয়ায় পাশের জমিগুলো চাষের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে। কতিপয় লোকের প্রতি প্রশাসনের এমন স্বজনপ্রীতির কারণে আমরা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আর নষ্ট হওয়া সড়ক দিয়ে আমাদেরকেই বছরের পর বছর চরম দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে দ্রুতই সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ওবায়েদ বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার ক্ষমতা পুলিশের নেই। তাই উপজেলা প্রশাসন যখন আমাদের ডাকে তখন ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে গিয়ে আমরা মাঝেমধ্যে ভেকু মেশিন ও ট্রাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করে থাকি। যদি এমন অভিযান নিয়মিত করা যেত তাহলে হয়তোবা এমন অবৈধ কর্মকাণ্ডের কিছুটা লাগাম টানা সম্ভব হতো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম মোবাইল ফোনে জানান, খবর পেলে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এমন অভিযান আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত