ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কেশবপুরে খননেও যৌবন ফেরেনি প্রধান চার নদীর

কেশবপুরে খননেও যৌবন ফেরেনি প্রধান চার নদীর

যশোরের কেশবপুর উপজেলার বর্ষার অতিরিক্ত পানি হরিহর, বুড়িভদ্রা ও আপারভদ্রা নদী দিয়ে হরি নদীতে এবং পশ্চিমাঞ্চলের পানি কপোতাক্ষ নদ দিয়ে সাগরে নিষ্কাশন হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড হরি নদী খনন না করে ভুল পরিকল্পনায় হরিহর, বুড়িভদ্রা ও আপারভদ্রা নদী খননের উদ্যোগ নেয়। অপরদিকে, কপোতাক্ষ নদ খনন হলেও তালা উপজেলার পাখিমারা বিলের টিআরএম প্রকল্পটি মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমান এসব নদীতে স্রোত না থাকায় শেওলায় পরিপূর্ণ হয়ে আবারো পলিতে ভরাট হয়ে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে। যে কারণে খননেও যৌবন ফেরেনি চার নদীর। চলতি বছর বর্ষাকালে ভারী বর্ষণ হলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে কেশবপুর, মনিরামপুর, কলারোয়া ও তালা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী এলাকার লাখ লাখ মানুষকে। আশির দশকে পানি উন্নয়ন বোর্ড উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্পের আওতায় পোল্ডার নির্মাণের নামে জোয়ার ভাটাবাহী অসংখ্য নদনদীকে আবদ্ধ করে ফেলে। এতে জোয়ার ভাটার প্লাবন ভূমি বিল-খাল থেকে নদী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে জোয়ারের পলি প্লাবন ভূমিতে অবক্ষিত হতে না পেরে নদীবক্ষে জমে নদী ভরাটসহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে কপোতাক্ষ, হরিহর, আপারভদ্রা, হরিসহ খুলনা, সাতক্ষীরা জেলার অসংখ্য নদী পলিতে ভরাট হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছে। এর প্রভাবে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কেশবপুর শহরসহ পর্বাঞ্চল এলাকা ও মনিরামপুর উপজেলার আংশিক এলাকা ডুবে গিয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। ২০১৯ সালে বন্যার হাত থেকে রক্ষায় পাউবো হরি নদী খনন না করে ভুল পরিকল্পনায় হরিহর, বুড়িভদ্রা ও আপারভদ্রা নদী খননের উদ্যোগ নেয়। তিন নদীর প্রশস্ততা কমিয়ে খননে প্রায় ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এতে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান না হয়ে বরং ২ বছর যেতে না যেতেই পলিতে নদী ভরাট হয়ে মৃত খালে পরিণত হয়। পাউবো সমুদ্রের পলি ঠেকাতে গেল বছরের ২০ এপ্রিল আপারভদ্রা নদীর মুখে কাশিমপুরে সাময়িক ক্রস বাঁধ নির্মাণসম্পন্ন করে। নির্মাণের তিন-চার দিন পর বাঁধটি ভেঙে যায়। বাঁধটি মেরামতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। মঙ্গলকোট গ্রামের আজিজুর রহমান বলেন, বুড়িভদ্রা নদীর মঙ্গলকোট ব্রিজের দু’পাশ পলিতে ভরাটসহ হরিহর নদীর স্রোত না থাকায় শেওলায় পরিপূর্ণ হয়ে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। কচুরিপনায় ঢাকা পড়েছে নদীর তলদেশের পানি। অক্সিজেন স্বল্পতায় ব্যাহত হচ্ছে মাছের বংশবিস্তার। মাছ ধরতে না পেরে অনেক জেলে পরিবার বেকার হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সরকার ২০১১-১২ অর্থবছরে কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ৪ বছর মেয়াদি ২৬২ কোটি টাকার পুনর্খনন প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তালার পাখিমারা বিলে (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) টিআরএম বাস্তবায়ন করা। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিলে পাউবো পাখিমারা বিলের বিধ্বস্ত পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারের অজুহাতে টিআরএম কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ফলে দুই বছরেই নদ পলিতে ভরাটসহ টিআরএম বিলের সংযোগ খালটিও ভরাট হয়ে নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। কপোতাক্ষ-শিবসা পানি কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মঈনুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালের জুনে সরকার দ্বিতীয় পর্যায়ে পাখিমারা বিলে পুনরায় টিআরএম চালু করতে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু ৩ বছরে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া, এ প্রকল্পে পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারে কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। এখনো জমির মালিকের ক্ষতিপূরণের বকেয়া ৪ বছরের অর্থ বিতরণের কাজ শুরু হয়নি। ফলে টিআরএম চালু অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছে। এর আগে টিআরএম চালু করে জনগণ সুফল পেয়েছে। এ কারণেই পাখিমারা বিলে পুনরায় টিআরএম চালুর দাবি কপোতাক্ষ অববাহিকার জনপদের। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, গত বছর আপারভদ্রার ক্লোজার খুলে দেওয়া হয়। এখন নদীতে জোয়ার ভাটা হবে। অপরদিকে, কপোতাক্ষের পাখিমারা বিলের কৃষকরা টিআরএম চালুর জন্য জমি দিতে রাজি হয়নি। ক্ষতিপূরণের টাকা গ্রহণ না করায় আপাতত টিআরএম কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কপোতাক্ষ নদীতে এখনো জোয়ার ভাটা চালু রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত