নওগাঁয় দলিল লেখকদের ধর্মঘট

জমি বেচাকেনা বন্ধরাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁ সদর উপজেলা দলিল লেখকদের ধর্মঘটের কারণে জমি নিবন্ধন (রেজিস্ট্রি) ও সম্পাদনের কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। জমি নিবন্ধনের কাজ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। অন্যদিকে সরকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে এ ধর্মঘট পালন করছেন দলিল লেখকরা। সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় ও দলিল লেখক সমিতি সূত্রে জানা যায়, শহরের লাইব্রেরি পট্টিতে অবস্থিত জেলা রেজিস্ট্রার ও সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়। একসময় পুরোনো ভবনের চত্বরে দলিল লেখকরা সেরেস্থা করে দলিল সম্পাদনের কাজ করে আসছিল। নতুন ভবন নির্মাণের কারণে জেলা রেজিস্ট্রার ও সদর উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার শহরের পাইকারি কাঁচাবাজারের পাশে অস্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে পাশেই দলিল লেখকরা একটি ভাড়া জায়গায় তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। এভাবে প্রায় তিন বছর সেখানে কার্যক্রম চলে। সম্প্রতি নবনির্মিত চারতলা ভবনে স্থায়ীভাবে জেলা রেজিস্ট্রার ও সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু এখানে দলিল লেখকদের সেরেস্থা বা বসার মতো জায়গা নাই। দলিল লেখক সমিতির পক্ষ থেকে সেরেস্তার জায়গা দেয়ার জন্য জেলা রেজিস্ট্রার ও সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রারকে আবেদন করা হয়। কিন্তু তারা জায়গা দিয়ে অস্বীকৃতি জানায়। এমনকি ওই সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি মহাপরিদর্শক নিবন্ধনকেও (আইজিআর) জানানো হয়। দলিল লেখকদের বসার জায়গা না দেয়ার প্রতিবাদে গত ১ফেব্রুয়ারি থেকে ধর্মঘট পালন করছে। দলিল লেখকদের সেরেস্তা সেই সবজি বাজারে পাশেই রয়েছে। ধর্মঘটের কারণে জমি নিবন্ধন (রেজিস্ট্রি) ও সম্পাদনের কাজ বন্ধ থাকায় জমি বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। জমি বেচাকেনা বন্ধ থাকায় সরকার প্রায় ২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নওগাঁ সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ওয়াজারাত হোসেন টিপু বলেন, আমাদের সমিতির সদস্য ১২৩ জন। এছাড়া সহযোগী আরো ২৫ সদস্য আছেন। যখন পুরোনো ভবন ছিল, তখন সাব-রেজিস্ট্রার চত্বরে প্রাচীরের ভেতরে আমরা সেরেস্তা করে বসতাম। আমাদের বসার জন্য জেলা রেজিস্ট্রার ও সদর সাব-রেজিস্ট্রারকে আবাদেন দিয়েছি। কিন্তু নতুন ভবন হওয়ার পর চত্বরে জায়গা থাকা সত্ত্বেও আমাদের বসতে দেয়া হচ্ছে না। আমাদের বসার জায়গা না থাকলে দলিল লিখা সম্ভব না। এছাড়া আমাদের যে আয়ের উৎস তা দিয়ে ভাড়া জায়গায় থাকাও সম্ভব না। তিনি বলেন, সাব-রেজিস্টার কার্যালয় এক জায়গায় আর দলিল লেখকদের সেরেস্তা আরেক জায়গায় হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হবে। বিষয়টি আমরা আইজিআর, জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অবহিত করা হয়েছে। এই সমস্যার সমাধান না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। সদর উপজেলার শৈলগাছী ইউনিয়নের দিঘিরহাট গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারা খাতুন বলেন, আমার বড় ছেলে সৌদি আরবে কাজ ঠিক হয়েছে। ভিসার কাজও সব শেষ হয়েছে। বিমান ভাড়ার টাকা জোগাড়ের জন্য কিছু জমি বিক্রি করা দরকার। দলিল লেখকদের ধর্মঘটের কারণে গত ১৮ থেকে ২০ দিন ধরে সেই কাজটাই হচ্ছে না। কেউই দলিল লিখতে চায় না। এখন আমরা কী করব বুঝতে পারছি না। নওগাঁ সদর উপজেলার সাব- রেজিস্ট্রার রবিউল বলেন, রবি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৪৫টি দলিল নিবন্ধন হয়ে থাকে। কিন্তু চলতি মাসে এ পর্যন্ত মাত্র ১৭টি দলিল নিবন্ধন হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে প্রায় ৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। তিনি বলেন, জেলা শহরের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের জন্য ৩৩ শতাংশ জায়গা দরকার। সেখানে আমাদের আছে মাত্র ২৬ শতাংশ। শহরের মধ্যে কার্যালয় হওয়ায় রাস্তার জন্য অনেক জায়গা বাদ গেছে। সেখানে আছে মাত্র ২০ শতাংশ। আমাদের জায়গা স্বল্প। এর মধ্যে সেরেস্তা যদি করা হয় মোটরসাইকেল বা যারা মাইক্রো নিয়ে আসবে তাদের যানবাহন রাখার জায়গা হবে না। কার্যালয়ে দলিল লেখকদের সেরেস্তার জন্য জায়গা দিতে হবে- এমন কোনো বিষয় আমার জানা নেই।