কেশবপুরে ১১ ইটভাটার মধ্যে আটটিই অবৈধ

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের কেশবপুর উপজেলার ১১টি ইটভাটার মধ্যে আটটি ইটভাটা অবৈধভাবে চলছে দীর্ঘ একযুগ। সরকারি খাস জমি জোরপূর্বক দখল নিয়ে ইটভাটা তৈরি করে চালানোর পরে সবকিছু জেনেও প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই। উপজেলার সকল ইটভাটার কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে যেনে পরিবেশবান্ধব কর্মীরা ইটভাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলায় এবছর চালু অবস্থায় ইটভাটা রয়েছে ১১টি। এগুলো হলো- উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামে রহমান ব্রিকস, আলম ব্রিকস, বেগমপুর গ্রামে রিপন ব্রিকস, বারুইহাটি গ্রামে রোমান ব্রিকস, বায়সা (কালিবাড়ি) এলাকায় গাজী ব্রিকস ও গোল্ড ব্রিকস, দোরমুঠিয়া গ্রামে কেশবপুর ব্রিকস, কাশিমপুর গ্রামে প্রাণ ব্রিকস, গৌরিঘোনা গ্রামে এস এস ব্রিকস, সন্যাসগাছা গ্রামে বিউটি ব্রিক্স, সন্যাসগাছা ব্রিজের মাথা বাজারে প্রতিক ব্রিকস। এরই মধ্যে রিপন ব্রিকস ও রোমান ব্রিকস লোকালয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে। বিভিন্ন ইটভাটা এলাকা ঘুরে জানা গেছে, সাতবাড়িয়া গ্রামের রহমান ব্রিকস, বায়সা গ্রামের গাজী ব্রিকস ও দোরমুঠিয়া গ্রামের কেশবপুর ব্রিকসের কেবলমাত্র সকল প্রকার বৈধ লাইসেন্স ও অন্যান্য কাগজপত্র রয়েছে। বাকি ইটভাটার শুধু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদনের কপি ছাড়া আর কিছু নেই। ভাটার মালিকরা রাজনৈতিক দলের প্রভাব দেখিয়ে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সকল ইটভাটায় বর্তমান জ্বালানি হিসাবে কাঠের পরিবর্তে কয়লা ব্যবহার করলেও ভাটার বৈধ লাইসেন্স ও কাগজপত্র তৈরি কারার কারো কোনো গুরুত্ব নেই। সবকিছু চলছে স্বাধীন ভাবে। ইটভাটা তৈরি করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স করতে হয়, এটা হয়তো কেউ মনে করছেন না। এদিকে উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের প্রাণ ব্রিকসের মালিক মো: সাইফুল ইসলাম সরকারের কোটি টাকার খাসজমি দখল করে তাঁর ইটভাটা তৈরি করে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। উপজেলা প্রশাসন সব কিছু জানার পরেও নিরবতা পালন করে চলেছেন। এ বিষয়ে উপজেলার বুড়ুলী তহসিল অফিসের ইউনিয়ন সহকারী ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, খাসজমি দখল করে ইটভাটা তৈরি করার বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমিকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে এস এস ব্রিকসের মালিক মো: সোহরাব হোসেন বলেন, আমরা বৈধ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে আমাদের ভাটার ব্যবসা চালিয়ে আসছি। কেশবপুর উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও গাজী ব্রিকসের মালিক মো: আরমান গাজী বলেন, কেশবপুরের ২-৩টি ছাড়া অন্যান্য ইটভাটার মালিকদের বৈধ লাইসেন্স রয়েছে। তাছাড়াও বর্তমানে ভাটায় কোনো ব্যবসা নেই। সকল ইটভাটা এখন লসে চলছে বলে নতুন করে কেউ লাইসেন্স করার জন্য গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কেশবপুর সাতবাড়িয়া গ্রামের পরিবেশ কর্মী মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, কেশবপুর উপজেলায় ইটভাটা তৈরি করার স্বাস্থ্যসম্মত কোনো পরিবেশ নেই। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এই সব ইটভাটা তৈরি করে বছরের পর বছর ব্যবসা করে চলেছে। তিনি পরিবেশ রক্ষার জন্য কেশবপুর উপজেলার সব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: তানভীর হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে, এ সকল ইটভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: তুহিন হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।