ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অষ্টগ্রামের জনপ্রিয় মিষ্টান্ন ‘মুরালি’

অষ্টগ্রামের জনপ্রিয় মিষ্টান্ন ‘মুরালি’

কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের জনপ্রিয় মিষ্টান্নের নাম ‘মুরালি’। জিভে জল এনে দেয় লম্বা লম্বা এসব সুস্বাদু মুরালি। কদর রয়েছে দেশ-বিদেশে। অনেক বছর ধরে অষ্টগ্রামে তৈরি হয়ে আসছে সুস্বাদু এ মিষ্টান্ন। যারা হাওরে ঘুরতে আসেন বা কোনো কাজে আসেন একবার হলেও মুরালির স্বাদ নিতে ভোলেন না তারা। ধারণা করা হয়, মুরোলি থেকে মুরালির শব্দের উৎপত্তি। তবে কবে থেকে এ হাওরাঞ্চলে মুরালি তৈরি শুরু হয়েছে তা ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা বলতে পারেন না। সুস্বাদু মুরালি খেতে কিশোরগঞ্জসহ আশপাশের জেলা থেকেও ছুটে আসেন লোকজন। এরইমধ্যে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরেও। অষ্টগ্রাম উপজেলার পূর্ব-অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাড়ঘেঁষা ইকরদিয়া গ্রাম। নদীর ওপারেই হবিগঞ্জ জেলা। প্রতিদিনই এপার-ওপারের মানুষের যাতায়াত। কেউ বসে খেয়ে যান, কেউবা আবার পরিবারের সদস্যদের জন্য নিয়ে যান মুরালি। এখানকার মানুষজন কোথাও বেড়াতে গেলেও মিষ্টির জায়গায় থাকা চায় ‘মুরালি’। তবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় আগের মতো এত বেশি মুরালি তৈরি হয় না। আগে বেশ কয়েকটি মুরালি তৈরির দোকান থাকলেও এখন ঠিকে আছে মাত্র একটি। এখন এই একটি দোকানেও ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। কথা হয় মুরালি তৈরির কারিগর শাহেদের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রথমে লবণ, তেল, পানি ও ময়দা মেখে খামির করা হয়। এরপর খামির বেলে বড় মোটা রুটির মতো বানিয়ে ছুরি দিয়ে ১২-১৪ ইঞ্চি করে কাটা হয়। এরপর কড়াইয়ে সয়াবিন তেল দিয়ে সেগুলো ভেজে রাখা হয়। পরে গুড় জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় সিরা। মুরালির ভাজা টুকরাগুলোকে কড়াই থেকে তুলে বড় পাত্রে ভাজ করে রাখা হয়। পরে মুরালির ওপর গুড়ের গরম সিরা ঢালা হয়। সিরা ঢালা শেষে মুরালিগুলোকে ১৫-২০ মিনিট বড় চামচ বা হাতল দিয়ে নাড়তে হয়। ভালোভাবে সিরা মেশানো হলে কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডা করলে তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু মুরালি। প্রতিকেজি মুরালি ১৬০-২০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হয়। মুরালির দোকানের মালিক সালাউদ্দিন বলেন, এটা আমাদের ইকরদিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার। এখান থেকে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ কিনে নিয়ে যান। প্রবাসীরাও বিদেশে নিয়ে যান মুরালি। তিনি বলেন, গুড়, তেল ও ময়দার দাম বাড়ার কারণে মুরালি কম তৈরি করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে মুরালির দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় চাহিদা একটু কমে গেছে। আগে যেই ব্যক্তি দুই কেজি কিনতেন সেই লোক এখন কিনছেন এক কেজি। আগে দিনে ৪-৫ মণ বিক্রি করতে পারলেও এখন এক দুই মণের বেশি হচ্ছে না। মুরালি খেতে আসা শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাওরে এলেই অষ্টগ্রামের ইকরদিয়া ঘাটের মুরালির স্বাদ নিতে ভুলি না। নিজেও স্বাদ নিই, বাড়ির জন্যও নিয়ে যাই।’ পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাছেদ মিয়া বলেন, আমাদের অষ্টগ্রামের ইকরদিয়ার খাবার মুরালির একটি ঐতিহ্য রয়েছে। খেতে খুবই সুস্বাদ। তবে নিত্যপণ্যের দাম কমলে আরো অনেকে এই ব্যবসা করতে পারতেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত