ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চায়ের রাজ্যে কফি চাষ

চায়ের রাজ্যে কফি চাষ

চায়ের রাজ্যে মৌলভীবাজারে একসময় কফি চাষ কিছুটা অবাক হওয়ার মতো হলেও এখন পাহাড়ি টিলা ভূমিতে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে এই ফসলটি। উপযোগী মাটি, আবহাওয়া, জলবায়ু ও উপযুক্ত পরিবেশে তা সম্ভব হচ্ছে। জানা গেছে, এ জেলায় প্রথমে শখ করে কয়েকজন কফির চারা রোপণ করলেও এখন অন্যান্য সাথী ফসলের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জেলার মাটি ও জলবায়ু কফি চাষের জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায়, ব্যাপক চাষাবাদে আমদানিনির্ভরতা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের আকবরপুরের পাহাড়ি টিলায় চায়ের মতই গড়ে উঠছে কফি এলাকা। এ রকম ব্যতিক্রমী একটি ফলের বাগান এখানে গড়ে তুলেছেন আবদুল মান্নান। সম্প্রতি আকবরপুরে আবদুল মান্নানের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, কফি গাছ ছাড়াও টিলাজুড়ে দেশি বিদেশি নানান জাতের গাছ গাছালিতে পরিপূর্ণ তার বাগান। আবদুল মান্নান জানান, ২০১৯ সাল থেকে দুটি পাহাড়ি টিলা মিলে ৫ একর ৪৪ শতাংশ জায়গাজুড়ে তিনি কফির চারা রোপণ শুরু করেন। আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে ১০ টাকা দরে পাঁচশত চারা এনে রোপণ করেন। পরে সরকারিভাবে আরো ৩০০ চারা বিনামূল্যে তিনি পান। এর মধ্যে প্রায় একশত চারা মারা যায়। এখন প্রায় অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের সাতশত কফিগাছ আছে। আবদুল মান্নান বলেন, এ পর্যন্ত এই বাগানে ফলের গাছ লাগানোসহ আনুষঙ্গিক খরচ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। ৮ হাজার টাকা মাসিক বেতনের দুজন নিয়মিত শ্রমিক আছেন। এছাড়াও বছরে সার ও কীটনাশকের খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। কৃষি বিভাগের কাছে একটি প্রক্রিয়াজাত যন্ত্র চেয়েছি। যন্ত্র পেলে আরো কফির গাছ বাড়ানোর ইচ্ছে আছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ কেজি ফল তুলেছেন, আরো ২০ কেজি ফল আগামীতে তুলবেন। তবে স্থানীয়ভাবে কফি প্রক্রিয়াজাত করার সুযোগ নেই। রয়েছে বাজারজাতের সমস্যা। সদর উপজেলার বোরতলা গ্রামে মো. হুমায়ুন কবির বলেন, কফির ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে কৃষি গবেষণা থেকে চারা এনে কফি চাষ শুরু করেছি। অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের গাছে ফলন আসা শুরু হয়েছে। কফি ফল দেখে আগামীতে কফিচাষে আগ্রহী স্থানীয় কৃষক মুজাহিদ মিয়া। তিনি বলেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে অন্যান্য ফসলের ফাঁকে সাথী ফসল হিসেবে কফি চাষ করব। এতে মূল ফসলের কোনো ক্ষতি হয় না বরং সহজে কফি চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। মৌলভীবাজার আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সূত্রে জানা গেছে, কফি চারা রোপণের ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যেই কফি গাছে ফল আসা শুরু হয়েছে। এটি অন্যান্য ফসলের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। কফিগাছ ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত অনায়াসে বেঁচে থাকে। যার কারণে কৃষকরা কফি চাষে দিনদিন আগ্রহী হয়ে উঠেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ জানান, পতিত, অনুর্বর ও টিলার জমিতে কফি চাষ ব্যাপকভাবে করা সম্ভব। এটি অন্যান্য ফসলের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত