তিন বছরে আবাদ বেড়েছে তিনগুণ

বাম্পার ফলনেও হাসি নেই ঈশ্বরদীর সরিষা চাষিদের মুখে

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলমাস আলী, ঈশ্বরদী (পাবনা)

পাবনার ঈশ্বরদীতে ৩ বছরে সরিষার আবাদ বেড়ে হয়েছে তিন গুণ। উপজেলায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হলেও কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন উপজেলার সরিষা চাষিরা। গত ২ বছর লাভের মুখ দেখলে ও এ বছর বাজারে সরিষার দাম কম থাকায় লাভ করতে পারবেন কি না, সেই আশঙ্কা তাদের। উপজেলার গত দুই বছর সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা সরিষার চাষে ব্যাপক আগ্রহী হয়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা আবাদ করেছে কৃষক। এ বছর ঈশ্বরদীতে ১ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। ২০২১-২২ মৌসুমি যেখানে ৬৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হলেও ২০২২-২৩ মৌসুমে আবাদ বেড়ে ১ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। বর্তমান ২০২৩-২৪ মৌসুমে ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। বিগত দুই মৌসুমে ১ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ বেড়েছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। তবে সরিষার বাজারমূল্য কম থাকা এবং শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, সার কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় আবাদে খরচ বেড়েছে। তাই লাভবান হওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। উপজেলায় কৃষক ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমন ধান কাটার পরে জমি ফেলে না রেখে সরিষার আবাদ শুরু হয়। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সরিষার বীজ জমিতে বপন করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সরিষা কেটে মাড়াই করে ঘরে তোলা হয়। বর্তমানে উপজেলার বেশিরভাগ সরিষায় মাঠ থেকে কেটে এনে মাড়াই করে বাড়ির আঙিনায় রোদে সরিষা শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। এবার উপজেলায় মোট ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। এ উপজেলায় এবার বারি-১৪, বারি-১৬, বারি-১৮, বিনা-৯ বিনা-১১ ও টরি-৭ উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতিমণ সরিষা প্রকারভেদে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর প্রতি মণ সরিষা স্থানীয় বাজারে বিক্রয় হয়েছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। তার আগের বছর বিক্রয় হয়েছে প্রতি মন সরিষা ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা। এবার সরিষার দাম গত দুই বছরের চেয়ে অনেকটা নিম্নমুখী। গতকাল সরেজমিন উপজেলার মুলাডুলি, দাশুড়িয়া, সলিমপুর, সাহাপুর, পাকশী, সাড়া ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সরিষা চাষিই মাঠ থেকে সরিষা কেটে এনে মাড়াই করে এখন শুকাতে শুরু করেছেন।

তারা বলেছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। কেউ কেউ স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু সরিষার দাম গত দুই বছরের চেয়ে কম হওয়াই তারা হতাশ। তাদের মুখে নেই হাসি।

উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের পতিরাজপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় সরিষা চাষী আবেদ আলি ও খোকন মিয়ার সঙ্গে। তারা জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। জমির খাজনা এবং শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় সরিষা আবাদে খরচ বেড়েছে গতবারের চেয়ে বেশি। কিন্তু গত বছরের লাভের অঙ্ক হিসাব করে এবার সরিষা চাষ করে লাভ হবে কি না, সেই শঙ্কায় পড়েছি। স্থানীয় বাজারে সরিষার দাম গত দুই বছরের চেয়ে অনেক কম হওয়ায় লোকসান গোনার শঙ্কায় আছি। উপজেলার আরামবাডিয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আব্দুল আলীম জানান, সরিষা লাভজনক ফসল। আমন ধানকাটার পর ধানের জমিতে সরিষা আবাদ করলে প্রতি বিঘায় চার থেকে ৫ মন সরিষা হয়। এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করতে প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। সরিষার বর্তমান বাজার দাম কম হলেও কৃষকদের লোকসান গুনতে হবে না। এ বিষয়ে ঈশ্বরদী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ জহির রায়হান জানান, তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সরিষার ফলন পাওয়া যায়। আমরা সরিষা চাষের জন্য কৃষকদের যথারীতি উৎসাহ প্রদান এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। উপজেলায় সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৪ হাজার কৃষককে উচ্চ ফলনশীল জাতের ১ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডি এ পি, ও ১০ এমওপি বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনুকূল আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যায় এবার সরিষার আবাদে কোনো প্রকার রোগ বালাই আক্রমণ নেই। ফলে বাম্পার ফলন হয়েছে। অপেক্ষা করে বিক্রয় করলে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছি। কৃষকরা তাতে লাভবান হবেন।