শ্যামনগরে নোট-গাইড বইয়ের বিক্রি বেড়েছে

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলমগীর সিদ্দিকী, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)

শিক্ষার্থীদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে গাইড বই। পাঠ্যপুস্তকের নোট বা গাইড বই বাজারজাত নিষিদ্ধ থাকলেও শ্যামনগরে অবৈধ নোট-গাইড বই বিক্রির ধুম পড়েছে। উপজেলা শহরের লাইব্রেরিতে প্রকাশ্যে বেচাকেনা চলছে এসব বইয়ের। নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের জাঁতাকলে ঝরে পড়ছে অনেক দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী।

কতিপয় শিক্ষক ও কয়েকটি প্রকাশনীর প্রতিনিধিদের প্ররোচনায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নোট-গাইড কিনতে বাধ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা, বিপরীতে লাভবান হচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ভ্যানচালক সাবেরুল বলেন, সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়, তার ওপর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ। এর মধ্যে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা উচ্চমূল্যের গাইড বই। শিক্ষিত করার স্বপ্নে কিছুদিন আগে মেয়েকে কিনে দিয়েছেন গাইড বই বলে জানান তিনি। আর এসব নোট গাইড বই শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রির লাভের কমিশন পাচ্ছে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। এদিকে লাইব্রেরি সমিতির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সমিতির সদস্য ও সদস্য’র বাইরে থাকা লাইব্রেরির মালিকরা। সমিতি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে নোট গাইড বিক্রি না করলে জরিমানা ধার্য করেছে সমিতির নেতৃবৃন্দ এমন খবর ও রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমিতির এক সদস্য বলেন, সমিতির নিয়ম মানতে গেলে বেশি লাভ হবে; কিন্তু ক্রেতা ঠকে যাবে। আমি কম মূল্যে বই বিক্রি করব; কিন্তু সমিতির জরিমানার ভয়ে বিক্রি করতে পারছি না। জানা গেছে, সৃজনশীল মেধাবিকাশ নিশ্চিত করতে ১৯৮০ সালের নোট বই (নিষিদ্ধকরণ) আইনে এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এই আইন লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগের এক আদেশে নোট বইয়ের পাশাপাশি গাইড বইও নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ২০০৯ সালের নভেম্বরে নোট-গাইড বই নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তৎকালীন পুস্তক সমিতির সভাপতি। আপিল বিভাগে বিষয়টির ওপর শুনানি শেষে ওই বছরের নভেম্বরেই আপিল খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। ফলে নোট-গাইড মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিক্রি ও বিতরণ করা পুরোপুরি অবৈধ হয়ে যায়।

উপজেলার বিভিন্ন লাইব্রেরি ঘুরে দেখা যায়, বছরের শুরু থেকে দিগন্ত, লেকচার, পুথিনিলয় গ্লোবাল, ফুলকুড়ি, জুপিটার, স্কযার, আশার আলো, পঞ্জেরী, পপিসহ বিভিন্ন পাবলিকেশন্সের নোট ও গাইড বইয়ে সব লাইব্রেরি ভরা। প্রভাবশালী কিছু শিক্ষকের তত্ত্বাবধায়নে উপজেলাজুড়ে নোট ও গাইডবই বিক্রি হয় বলে দাবি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে নোট গাইড নয় সহায়ক বই বিক্রি করছেন বলে শিকার করেছেন কয়েক লাইব্রেরির মালিক। একাধিক অভিভাবক বলেন, শিক্ষকরাই বিভিন্ন কোম্পানির নোট-গাইডের সহায়তা নেয়ার কথা বলেন। শিক্ষকের কথা শুনে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে এসে বায়না করে গাইড কিনতে হবে। এসব গাইড- নোটের দাম আকাশছোঁয়া। দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা সবচেয়ে বিপাকে পড়ে। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নিষিদ্ধ নোট-গাইডের প্রচলনে সরকারের ভালো উদ্যোগ সফল হচ্ছে না। কয়েক বছর আগে গাইড কিনতে গেলে লাইব্রেরি কমিশন দিত এখন আর দেয় না বলে জানান এক অভিভাবক। এ প্রসঙ্গে এক সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমরা নোই গাইড বই কিনতে নিরুৎসাহি করছি। অভিভাবক সাবের জানান, শিক্ষকদের কারণে অতিরিক্ত মূল্যে কিনতে হচ্ছে। গাইড ও নোট বই ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীর মূল বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, নিষিদ্ধ নোট-গাইড বিষয়ে চিঠি দিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নোটগাইড বই না কিনতে নিরুসাহিত করা করা হয়েছে। শিক্ষকরা নোট-গাইড কিনতে বাধ্য কিংবা উৎসাহিত করলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।