ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উত্তরাঞ্চলে সমতল ভূমির চা বাগানে নতুন কুঁড়ি

উত্তরাঞ্চলে সমতল ভূমির চা বাগানে নতুন কুঁড়ি

প্রকৃতিতে এখন চলছে বসন্ত। মিষ্টি রোদ আর বাতাসের তালে তালে গাছের পাতা ঝরে পড়ছে মাটিতে। ঋতুরাজ বসন্তের এই সময়ে উত্তরাঞ্চলের সমতলের চায়ের অঞ্চলে চা বাগানে প্রুনিং (ছাঁটাই বা কলমের) কাজ চলার পরে বাগানে বাগানে উঁকি দিচ্ছে নতুন কুঁড়ি। তবে এই শীতের আমেজও দ্রুত কুঁড়ি ছাড়ছে চা গাছ প্রুনিং করা ডালে উঁকি দিয়েছে নতুন কুঁড়ি। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার যে সকল সমতল পতিত জমি এখন চায়ের রয়েছে। সিলেট অঞ্চলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদন অঞ্চল হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড় পেয়েছে। এ জেলাকে অনুকরণ করে চা চাষে এগিয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলা। এর আগে, এগুলোই চা-গাছদের সাহায্য করেছে কুঁড়িগুলোর প্রকৃতির মাঝে দ্রুত বের করে আনতে। এরই সাথে রয়েছে চা বাগানের হিসাব অনুযায়ী গড় উৎপাদন বাড়ার লক্ষ্যে প্রতি বছরে একবার করে চা-গাছে প্রুনিং করা হয়। চা-বাগানে একে বলে ছাঁটাই করা। সেটা শুরু হয় জানুয়ারির পর থেকে। একেক বাগানে এই প্রুনিং-এর তারিখ একেক সময় অর্থাৎ কিছু আগে-পিছে হয়ে থাকে। এদিকে, চা গাছের বৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্যতা এবং অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রতিবছর বাগানে বাগানে প্রুনিং কার্যক্রম চলে আসছে। বছরের শেষ দুই মাস ও বছরের শুরুর দুই মাস প্রুনিং কার্যক্রম চলায় সেসময় চা কারখানা বন্ধ থাকে। এরই মধ্যে চা বাগানে প্রুনিং শেষ হয়ে গেছে। এখন চলছে গাছের গোড়া পরিষ্কার, মাটি নিংড়ানো, জংলি লতাগুল্ম পরিষ্কার ও পানি দেওয়ার কাজ করছে চাষিরা। নতুন পাতা চলে আসায় কয়েক সপ্তাহ পরে আবারও চালু হবে কারখানাগুলো। তবে উৎপাদন ভালো হওয়ার আশা করলেও দাম নিয়ে এবারও শঙ্কায় থাকবেন বলে জানিয়েছেন চা চাষিরা। অভিজ্ঞ টি-প্ল্যান্টার এবং চা বাগানের ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, বাগানের চা গাছগুলোতে প্রুনিং শেষে নতুন কুঁড়ি গজায়। প্রুনিংয়ের পর চা বাগানগুলোতে চা গাছের গোড়া সাফা করানো, চা গাছের মাঝে বেড়ে উঠে লতাগুলোকে উপড়ে ফেলে দেয়া প্রভৃতি কাজ চলে। পরবর্তীতে চা গাছে আসে নতুন পাতা। বর্তমানে চা গাছে প্রুনিং করার পর গাছের গোড়ার মধ্যে উলু পোকার (উঁই পোকা) বাসা থাকে। চা গাছের জন্য উলু পোকা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই উলু চা গাছের গোড়া বা শরীরের অংশ খেয়ে ফেলে। তখন চা গাছগুলো মরে যায়। তাই প্রুনিং এর পর আমরা সমতল জায়গায় তা পরিষ্কার করে থাকেন বলে জানান উপজেলার মাঝিপাড়া এলাকার চা চাষি আমিরুল ইসলাম। উপজেলা সদরের মমিনপাড়ার চা চাষি নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ইয়াং-টিতে (বাচ্চা চারা) এই সময় মাটি আচ্ছাদন করে কচুরিপানা দিয়ে মাটি ঢেকে দেয়া হয় যাতে করে মাটির পানি বাষ্প না হয়ে যায়। এটাকে চায়ের ভাষায় বলে ‘মার্চিং। এ ছাড়া চা বাগানের ক্লোন নার্সারিতে চলে মাটি দিয়ে প্লাস্টিক ব্যাগ ভরার কাজ। তাছাড়া এখন বৃষ্টি না হওয়ায় সেলোমেশিন দিয়ে চা গাছে পানি দিয়ে থাকি। পঞ্চগড়ের বাংলাদেশ চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, ‘সমতল ভূমিতে চা চাষের জন্য পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলা অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। সদ্য সমাপ্তকৃত (২০২৩) মৌসুমে ১২ হাজার ১৩২ দশমিক ১৮ একর সমতল জমির ৩০টি চা বাগান এবং ৮ হাজারেরও অধিক ক্ষুদ্রায়তনের বাগান থেকে চা উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি। যা বিগত বছরের তুলনায় ১ লাখ ৬৫ হাজার ২২৬ কেজি বেশি। এই উৎপাদনে টানা তিনবারের মতো উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে এ অঞ্চল বলে জানিয়েছে চা বোর্ড।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত