ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রংপুর অঞ্চলে ফসলের সমারোহ

রংপুর অঞ্চলে ফসলের সমারোহ

পানিশূন্য রংপুর অঞ্চলের ৫৭টি নদীতে জেগে ওঠা চরাঞ্চলের চারদিকে এখন ফসলের সমারোহ। রংপুর বিভাগের ৮ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রমত্তা নদীর জেগে ওঠা চরাঞ্চলে ৩২ প্রজাতির ফসলসহ শাকসবজি চাষ হচ্ছে। ওই সব চরাঞ্চলে সবজি চাষে ভালো ফলন হচ্ছে; কিন্তু কৃষক দাম কম পাচ্ছে। জানা গেছে, রংপুর বিভাগের রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, ঠাকুরগাও এবং পঞ্চগড় জেলায় ৫৭টি নদী এক সময় পানি পানিতে টইটুম্বর ছিল। ওই নদীগুলোর মধ্যে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, করতোয়া, সানিয়াজান, সতি, মরা সতি, গিদায়ী, ঘাঘট অন্যতম। কিন্তু বেশ কয়েক বছর থেকে ওই সব নদীতে শত শত চর জেগেছে।

এসব চরে আলু, রসুন, পেঁয়াজ, ফুলকপি, এসকস, বাধাকপি, মিষ্টিকুমরা, মিষ্টি আলু, মরিচ, লালশাক, পাটশাক, পাশাপাশি গম সরিষা, মসুর ডাল, ছোলা, বাদাম, চিনা বাদামসহ ৩২ প্রজাতীর ফসল ও শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে চাষ করছে কুষক। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারি ও সদর উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর চরে বেলে দোআঁশ মাটিতে চাষিরা স্বল্প খরচে ফলিয়েছেন নানা ধরনের ফসল। বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষে ভালো ফলন মিললেও দাম ভালো পাচ্ছেন না কৃষকরা। লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় জেগে ওঠা তিস্তার চরে জমির পরিমাণ ১৯ হাজার ৬৩ হেক্টর। এরমধ্যে আবাদি জমির পরিমাণ ১৬ হাজার ৯৪৮ হেক্টর। এ বছর এর মধ্যে ৫ হাজার ৬৬৫ হেক্টর চরের জমিতে নানা জাতের সবজির চাষ হয়েছে। চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, আদিতমারী উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বালাপাড়া, কুটিরপাড়, কালমাটি, আনন্দবাজার, কালিগঞ্জের রুদ্রেশ্বর, কাকিনা, মহিষামুরি, ইশোরকুল চরে এবার প্রচুর পরিমাণে আলু চাষ হয়েছে। এছাড়া বেগুন, টমেটো, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শিম, করলা, পুঁইশাক ও লালশাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হচ্ছে। চাষ হচ্ছে পেঁয়াজ ও রসুনও। কৃষকরা বলছেন, এরই মধ্যে বাজারে কিছু পেঁয়াজ উঠলেও খুব শিগগিরই পুরোদমে নতুন পেঁয়াজ এবং রসুন উঠবে। চরগুলোতে এসব আবাদের পাশাপাশি প্রচুর গম, ছোলা, ভুট্টা, মসুর, সরিষা ও বাদাম চাষ করা হচ্ছে। কৃষকরা জানান, বেলে দোআঁশ মাটিতে বেশি সার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। পোকাণ্ডমাকড়েরও আক্রমণ কম। শুধু পানি পেলেই চরে সব ফসলের আবাদ ভালো হয়। চাষি রমজান আলী জানান, নদী বড় থাকলে নৌকায় তাদের যোগাযোগ সহজ হয়। কিন্তু সেসময় পানি ঢোকার কারণে তাদের চাষের জমি কমে যায়। আবার পানি নেমে গেলে যে পলি পড়ে তাতে সবজির চাষ ভালো হয়। কিন্তু বিশাল চর আর নদী পাড়ি দিয়ে সবজি নিয়ে যেতে হয় বলে দাম বেশি পেলেও ব্যয়ও বৃদ্ধি পায় সবজি বহনে। চাষি ওমর আলী বলেন, ‘নদীর ওপারে যদি টমেটোর কেজি ১০০ টাকা হয়, তাহলে এপারে ৫০ টাকা। এটাই নদীর চরের এপার-ওপার জমিতে উৎপাদিত ফসলের দামের এমন পার্থক্য। গ্রীষ্মকালে পানি কমে নদী ছোট হয়ে আসে। তখন সবজি গরু-মহিষের গাড়ি অথবা ট্রলিতে করে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু চরের মাঝে যদি আবার ছোট নদী থাকে তাহলে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। এসব ভোগান্তির কারণেই আমরা ভালো সবজি উৎপাদন করলেও ভালো দাম পাই না। তবে এ বছর সব সংকট কাটিয়েও ভালো ফলন ও দাম পাবো আশা করছি।’ চাষিরা জানান, তিস্তা নদীর পাড় থেকে চরের গ্রাম পর্যন্ত পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হলে চাষিদের কষ্ট অনেকটাই কমে যাবে। এতে কৃষকরা সহজে নদীপাড় পর্যন্ত তাদের ফসল নির্বিঘ্নে নিয়ে যেতে পারবেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা করা গেলে উৎপাদিত এসব সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে অর্থনৈতিকভাবে চরের এসব কৃষকের সংসারে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আসবে। লালমনিহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, ‘চরের মাটিতে যেকোনো ফসলের আবাদ অত্যন্ত ভালো হয়ে থাকে। প্রতিবছর বন্যায় জমি তলিয়ে যাওয়ার পর নতুন করে পলি জমার কারণে চাষাবাদ ভালো হয়।’ এ বছর দাম কিছুটা ভালো মিললে কৃষকরা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে বলেও আশা করছেন তিনি। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে তিস্তা বেষ্ঠিত রংপুর জেলার ২১টি ইউনিয়নের জেগে ওঠা চরে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২ হাজার হেক্টর জমি বেশি।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো: ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের চাষ করতে সার, বীজ এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এতে করে কৃষক নদী বেষ্ঠিত চরাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ফসল চাষ করছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত