কেশবপুরে পানিবন্দি মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি

‘উঠানে পানি থাকায় ঘর থেকে বের হয়ে বাঁশের সাঁকোর উপর ভরসা করে সবকিছু করতে হয়। এ পরিবেশে পড়াশোনায় ঠিকমতো মনও বসে না। প্রায় ৩ মাস আমরা উঠানে কাদাপানির কারণে খেলাধুলা করতে পারিনি।’ বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াতের সময় এসব কথাগুলো বলছিল যশোরের কেশবপুর উপজেলার মনোহরনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমিতা হালদার ও তার ভাই সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমিত হালদার। মাছের ঘেরের পানি সেচ দিয়ে বাগডাঙ্গা-মনোহরনগর খালে ফেলায় পলিতে নদনদী ভরাট হওয়ার কারণে নিষ্কাশিত হতে না পেরে পানি উপচে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা চলছে গত কয়েক বছর ধরে। মনোহরনগর-বাগডাঙ্গা গ্রামের শতাধিক পরিবারকে বছরের ছয় মাস পানিবন্দি অবস্থায় থাকতে হয়। বাকি ছয় মাস কাটে কাদা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে। গ্রাম দুটির মানুষের ঘর থেকে বের হতে বাঁশের সাঁকোর উপর ভরসা করে চলাচল করতে হয়। ওই এলাকার পরিবেশ হয়ে পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। সরেজমিনে উপজেলার পাঁজিয়া ইউনিয়নের মনোহরনগর-বাগডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এবারও শীতকালে মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠে আসায় ওই এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। মনোহরনগর গ্রামের মানুষের বাড়িতে এখনো পানি রয়েছে। রান্নাবান্নাসহ সাংসারিক কাজ করতে গিয়ে গৃহবধূরা পড়েছেন বিপাকে। পানির সঙ্গে সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হচ্ছে তাদের। মনোহরনগর গ্রামের গৃহবধূ নমিতা হালদার বলেন, ‘উঠানে পানি থাকায় ঘর থেকে পাকা রাস্তায় উঠতে ও সাংসারিক কাজ করতে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। এ পরিবেশে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যেতেও সমস্যা হয়। তারা ঠিকমতো লেখাপড়ায় মনও বসাতে পারে না।’ কৃষক অনাদি হালদার বলেন, গত ৬ মাস ধরে গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবারের বাড়িতে পানি উঠে আসায় পরিবেশ পরিস্থিতি হয়ে পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। বাড়ি থেকে রাস্তায় বের হতে বাঁশের সাঁকো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। এখন কিছু কিছু বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা কালিদাসী রায় বলেন, উঠান থেকে পানি সরে যাওয়ার পর কাদা ও স্যাঁতসেঁতে হয়ে বাড়ির পুরো পরিবেশই নষ্ট হয়ে পড়ে। কাদা ও পানির ভেতর দিয়েই সাংসারিক কাজ করতে হয়। রবিন সরকারের স্ত্রী কবিতা মন্ডল বলেন, গত ৫ বছর এলাকায় বোরো আবাদ হয়নি। যে কারণে গো-খাদ্যের তীব্র সংকটে পড়তে হয়। মনোহরনগর-বাগডাঙ্গা গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বৈদ্যনাথ সরকার বলেন, গ্রামের মানুষের বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। শীতকালে পানির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে ওই সব বাড়ির মানুষদের পড়তে হয় চরম বিপাকে। পচা কাদাপানির কারণে মানুষের জীবনে এক দুর্বিষহ পরিবেশ নেমে আসে। ২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক বাবর আলী গোলদার বলেন, নদনদী পলিতে ভরাট হওয়ায় মাছের ঘেরের পানি সেচ দিয়ে বাগডাঙ্গা-মনোহরনগর খালে ফেলায় নিষ্কাশিত হতে না পেরে পানি উপচে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

একই সঙ্গে এলাকার বিলগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। যে কারণে এলাকার কৃষকরা বোরো আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে উপজেলার পাঁজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসীম উদ্দীন বলেন, এলাকার জলাবদ্ধতার বিষয়টি উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। এ সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যও সভায় বলা হয়। কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সী আছাদুল্লাহ বলেন, ভবদহসংলগ্ন ২৭ বিলের পানি কাটাখালীর স্লুইসগেট হয়ে ডায়ের খালের আট ব্যান্ড স্লুইসগেট দিয়ে শ্রী নদীতে নিষ্কাশন হতো। কিন্তু শ্রী নদী পলিতে ভরাট হওয়ার কারণে পানি সরছে না। ভবদহ প্রকল্পে শ্রী নদী অন্তর্ভুক্ত আছে। ভবদহ প্রকল্প অনুমোদন না হলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।