ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শ্যামনগর বেড়িবাঁধে দম্পতির টিকে থাকার সংগ্রাম

শ্যামনগর বেড়িবাঁধে দম্পতির টিকে থাকার সংগ্রাম

বন্যতলায় খোলপেটুয়ার নদীর ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধে ছোট্ট একটি খুপড়িতে থাকেন জাহানারা-ওজিয়ার দম্পতি। যাওয়ার কোনো জায়গা নেই বলে বাধ্য হয়েই বন্যতলার বেড়িবাধে খুপড়ি বেঁধেছেন তারা।

জাহানারা-ওজিয়ার দম্পতির মতো আরো ১৭টি পরিবার খুপড়ি বেঁধেছিল এই বেড়িবাঁধে। কিন্তু আইলা, আম্ফান, বুলবুলের করাল গ্রাসের শিকার হয়ে সময়ের ব্যবধানে কাজের খোঁজে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে সেসব পরিবার। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে একে একে বাস্তচ্যুত হচ্ছে উপকূলের হাজারো মানুষ। এমনটাই বলছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বন্যতলার জাহানারা বেগম। তিনি জানান, ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময় নদীগর্ভে চলে যায় তাদেরসহ বন্যতলার ১৭টি পরিবারের বাড়িঘর। ভেসে যায় খেত, খামার, পুকুর সব কিছু। তখন ভিটেমাটি ছাড়া পরিবারগুলোর ঠাঁই হয় বেড়িবাঁধের উপর। কিন্তু এলাকায় কাজ না থাকায় একে একে ১৭টি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। জাহানারা বেগম বলেন, আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, তাই এই খুপড়িই শেষ ঠিকানা। শীত-বর্ষা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাস সব যেন আমাদের কপালে? তিনি আরো বলেন, আমার বিয়ের পর পাঁচবার ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তারপরও টিকে ছিলাম। কিন্তু আম্ফানে শেষ সম্বলটুকুও গেছে। প্রতিবার ঝড় হয়, আর এলাকা থেকে একে একে মানুষ কমতে থাকে, জাহানারা আক্ষেপ করে, সরকার মানুষের বসবাসের ঘর দেয়; কিন্তু আমরা দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ঘর পাইনি। কেউ দেখে না আমাদের! উপকূলীয় মানুষের জীবন সংগ্রাম নিয়ে জলবায়ু কর্মী এসএম শাহিন আলম বলেন, উপকূলে ঘন ঘন ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে মানুষ বসতভিটা হারাচ্ছে। তাদের করেছে ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত। তাদের নিয়ে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করছি; কিন্তু কেউ সাড়া দেয় না কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাস্তচ্যুত মানুষের জন্য রাষ্ট্রকে অগ্রাধিকারভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে। পদ্মপুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জিএম আমজাদ হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার তারা আশ্রায়হীন হয়েছে, বার বার আমি তাদের পুনর্বাসন করেছি। সমাজসেবক আব্দুর রহিম বলেন, বাঁধে পাইপ বসিয়ে নোনা পানি তোলায় বাঁধে ভাঙন ধরে মানুষ আশ্রায়হীন হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নজিবুল আলম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে পাইপ অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত