ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গাছে আসেনি পর্যাপ্ত মুকুল

দুশ্চিন্তায় আম চাষিরা
গাছে আসেনি পর্যাপ্ত মুকুল

সুস্বাদু ফলের নাম শুনলে আমের কথা মনে পড়ে প্রথমেই। উপজেলা আম বাগানগুলোতে এবার পর্যাপ্ত মুকুল আসেনি। কেউ বলছে জলবায়ু পরিবর্তন, কেউ বলছে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকা, কেউ বলছে অসময়ে বৃষ্টির কারণে এবার আমের মুকুল কম এসেছে।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এগুলো মানতে নারাজ, তারা বলছেন সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে আমবাগান পরিচর্যা না করার কারণে মুকুল কম আসতে পারে। মুকুল কম আসায় এবছর চাষিদের মনে ফলন নিয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে। কারণ ফাল্গুন শেষের দিকে হলেও বসন্ত আসেনি উপজেলার আম গাছে। এসময়ে গাছে মুকুলে মুকুলে ভরে থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ গাছেই আসেনি মুকুল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রচণ্ড শীত, অসময়ে বৃষ্টিই অন্যতম কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন আম চাষিরা ও কৃষিবিদরা। গতকাল সরেজমিনে উপজেলার পৌর এলাকা, মুলাডুলি, দাশুড়িয়া, পাকশী, সাঁড়া, সাহাপুর, লক্ষীকুন্ডা, ছলিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, লক্ষনা, নেংড়া, হাড়িভাঙ্গা জাতের কিছু চারা গাছে (ছোট গাছে) আমের মুকুল আসলেও অন্যন্য অধিকাংশ গাছেই নেই মুকুলের ঘ্রাণ।

এতে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে চাষিদের। উপজেলা সাঁড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের আম চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই সব গাছে মুকুল এসেছিল। কিন্তু চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হয়ে মার্চ মাস চলছে। কিন্তু এখানকার শত শত আম গাছে কোনো মুকুল নেই। দুয়েকটি গাছে মুকুল থাকলেও একেবারেই কম। আমরা স্প্রে ও সেচ দেওয়ার কোনো কমতি রাখিনি।

শুনছি অতিরিক্ত শীতের কারণে নাকি এমনটা হয়েছে। একই ইউনিয়নের ইলশামারি গ্রামের বাসিন্দা সলেমান আলী। এবার তার আছে প্রায় চার বিঘা আমের বাগান। কিন্তু তার গাছেও আসেনি আশানারূপ মুকুল। তিনি বলেন, কয়েক বছর থেকেই আমের ভালো দাম না থাকায় এবং বাগান পরিচর্যার জন্য সার, কীটনাশক শ্রমিকের মজুরিসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বৃদ্ধির ফলে লোকশানে পড়েছি। আর এবার এখন পর্যন্ত গাছে মুকুল আসেনি। আর মুকুল আসার সময়ও প্রায় শেষ। আমার ধারণা আমের মুকুল আর আসবে না। মুলাডুলি ইউনিয়নের আম চাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, বৈচিত্র্য আবহাওয়ার কারণে ঈশ্বরদীর আম গাছগুলোয় এবার মুকুল কম এসেছে।

নাবি জাতের কিছু গাছে মুকুল আসলেও বড় গাছ গুলোয় ডগায় মুকুলের বদলে বের হচ্ছে ছোট কচি পাতা। এতে আমরা ক্ষতি মুখে পড়বো বলে মনে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এবার লক্ষণা, ফজলি, খিরসাপাত, গোপাল ভোগ, আশ্বিনাসহ প্রায় ১০ জাতের তিন বিঘা জমিতে আমার আম বাগান রয়েছে। কিন্তু মুকুল তেমন আসেনি। তিনি আরও বলেন, এবার দীর্ঘমেয়াদি শৈত্যপ্রবাহ, অতিরিক্ত শীত ও ঠান্ডা, অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় আমের গাছে মুকুল আসছে না। এতে আমাদের মনে দুশ্চিতা দেখা দিয়েছে। উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের আম চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, এবছর শীতের প্রকোপ অনেক বেশি ছিলো।

আর জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে। মূলত এ কারণেই আম বাগানে এখনো মুকুল আসেনি। তাই খুব চিন্তায় আছি আমরা। কারণ গাছে মুকুল আসার সময় প্রায় শেষ। এমনিতেই চাষিরা অনেক কষ্টে আছে কয়েক বছর থেকে আমের দাম পাচ্ছে না। এছাড়াও বিভিন্ন বালাইনাশকের দামও কয়েকগুণ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, মুকুল কম আসায় এবার আমের উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। এমনটা হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উপজেলার অর্থনীতি। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদী উপজেলায় ২৪০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান আছে। সঠিক নিয়মে ও উপযুক্ত সেচ ও স্প্রেসহ অন্যান্য প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই আম গাছে মুকুল আসবে।

তবে শীতের প্রকোপে ও অসময়ে বৃষ্টির কারণে বিশেষ করে বড় গাছে আমের মুকুল কম এসেছে। তবে এখনও যদি গরমের প্রবণতা বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে মুকুল আরও কিছু ফুঁটতে পারে। তবে সে মুকুলে আমের ফলন তেমন ভালো হবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত