কেশবপুরে নদী-খাল পলিতে ভরাট

বর্ষা মৌসুমে বন্যার আশঙ্কা

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের কেশবপুর উপজেলার অভ্যন্তরে নদ, নদী-খালগুলো পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে নরনিয়া ও ভায়না বিলের দুটি খালের ৩০০ মিটার খাল খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, কেশবপুর উপজেলার অভ্যন্তরে ৪টি নদনদী প্রবাহিত। এগুলো হলো- কপোতাক্ষ, বুড়িভদ্রা, হরিহর ও শ্রীহরি নদী।

এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন বিল অঞ্চলে একাধিক খাল রয়েছে। এ সমস্ত খালগুলোর মধ্যে আগরহাটি, ভরতভায়না, কাশিমপুর, বিলখুকশিয়া ও বুড়ুলী বিল অন্যতম। উপজেলার এ সকল নদীগুলো নাব্য হারিয়ে ও পলি মাটিতে ভরাট হয়ে তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। কপোতাক্ষ নদের নাব্য হারিয়েছে নদ শুকিয়ে গেছে। নদের চরগুলো ভূমিখেকোরা দখল করে ভোগ করছে। তাছাড়া বিলগুলোর মধ্যে হাজার হাজার মৎস্য ঘেরের ভেতরের বোরো আবাদ মৌসুমে ধানের চাষ করতে ঘেরের পানি নিষ্কাশনের জন্য বিলে সেচ দিয়ে ঘেরের পানি খালগুলো পড়ে থাকে। ওই সকল বিলের খালগুলো পলি জমে ভরাট হয়ে বিলের চেয়ে খালের তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় খাল দিয়ে কোনো পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। যার ফলে নদনদী ও খাল দিয়ে এই মুহূর্তে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে আগামী বর্ষা মৌসুমে উপজেলা ব্যাপী বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলার পাঁজিয়া ইউনিয়নের মনোহরনগর গ্রাম ঘেরের পানি স্যালোমেশিন দিয়ে সেচের মাধ্যমে বিল-খালে ফেলার কারণে খাল ভরাট হয়ে গ্রামের লোকালয়ে প্রবেশ করে গ্রামের শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত বলেন, কপোতাক্ষ নদে পলি জমে শুকিয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই খনন করা প্রয়োজন। তাণ্ডনা হলে এ বছর বন্যায় প্লাবিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাঁজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: জসিম উদ্দিন বলেন, এই মুহূর্তে বিলগুলোর খালগুলো খনন করা না হলে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বিল-খাল ও গ্রামগুলো বন্যায় প্লাবিত হবে। তিনি ২৭ বিলের খালগুলো দ্রুত খননের দাবি জানিয়েছেন।

কেশবপুর পৌর সভার মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, কেশবপুর পৌরসভার খোঁজাখাল, বুড়ীভদ্রা ও হরিহর নদীর পৌর অংশটুকু পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে নদী খনন করা না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে পৌর এলাকার বিস্তৃর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে যাবে। এরই মধ্যে ভোগতী নরেন্দ্রপুরসহ কয়েকটি বিলে পানির কারণে এ বছর বোরো ধানের আবাদ করতে পারেনি কৃষকরা।

কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, বর্ষা মৌসুমে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে হরিহর নদীর ৬ কিলোমিটার ও বুড়িভদ্রা নদীর ৬ কিলোমিটার খননের পরিকল্পনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের রয়েছে। তাছাড়া আগরহাটি, ভরতভায়না, কাশিমপুর, বিলখুকশিয়া ও বুড়ুলী বিল অংশ বিশেষ খনন করা প্রয়োজন বলে প্রকল্প প্রস্তুত করে পাঠানো হয়েছে। অর্থ প্রাপ্তির সাপেক্ষে খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এই মুহূর্তে আগামী বর্ষা মৌসুমে বন্যা মোকাবিলা করতে নরনিয়া বিলের ১৮০ মিটার খাল ও ভরতভায়না বিলের ১২০ মিটারসহ মোট ৩০০ মিটার খাল খননের জন্য প্রায় ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

এর খনন কাজ শিগগিরই শুরু করা হবে। তাছাড়া আপারভদ্রা ১৫ কিলোমিটার ও শ্রীহরি নদী ২৩ কিলোমিটার খননের পরিকল্পনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের রয়েছে।