ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সমতলে চায়ের স্বর্গ পঞ্চগড়

উৎপাদন বাড়লেও দাম নিয়ে ক্ষোভ
সমতলে চায়ের স্বর্গ পঞ্চগড়

চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে সমতলের চা। ২০২৩ মৌসুমে পঞ্চগড়সহ উত্তরের চার জেলায় ১২ হাজার ১৩২ একর জমিতে আট কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার ৭০৪ কেজি কাঁচা পাতা থেকে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি চা। যা গত মৌসুমের তুলনায় ১ লাখ ৬৫ হাজার কেজি বেশি এবং দেশের মোট উৎপাদনের ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত পাঁচ জেলায় ছোট-বড় ২৯টি চা বাগান গড়ে উঠেছে।

এছাড়া ক্ষুদ্র পর্যায়ে ৮ হাজার ৩৭১ জন চাষি বিভিন্ন পরিমাণের সমতলের জমিতে চা চাষ অব্যাহত রেখেছেন। সবমিলিয়ে ১২ হাজার ১৩২ দশমিক ১৮ একর জমিতে সম্প্রসারণ করা হয়েছে চা চাষ। ৫৮টি চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ২৮টি চা কারখানার মধ্যে পঞ্চগড়ে ২৭টি এবং ঠাকুরগাঁওয়ে একটি কারখানা চালু রয়েছে। বাকি ৩০টি কারখানার অনুমোদন হলেও অবকাঠামোগত কোনো কাজ এখনো শুরু হয়নি। এবার সারাদেশে তৈরি চা (মেড টি) উৎপাদন হয় মোট ১০ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৮ কেজি। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চল চা চাষ প্রকল্পের আওতায় ২৮টি চা কারখানায় চা উৎপাদন হয় ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি। যা দেশের মোট উৎপাদনের ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০২২ মৌসুমে পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের আওতায় চা উৎপাদন হয়েছিল ১ কেটি ৭৭ লাখ ৮১ হাজার ৯৬৮ কেজি। চা বোর্ড সূত্র জানায়, ২০০০ সালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার পরিত্যক্ত সমতল ভূমিতে শুরু হয় চা চাষ। এরপর প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে চা চাষের পরিধি। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ চা বোর্ড ‘উত্তরাঞ্চল চা চাষ প্রকল্প’ নামে সমতলে চা চাষ সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে।

এরপর ২০১৭ সালে পঞ্চগড়ে রেকর্ড ৫৪ লাখ ৪৬ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পঞ্চগড়ে ১০ হাজার ২৬৭ দশমিক ২ একর, পাশের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ১ হাজার ৪৫৭ দশমিক ২৯ একর, লালমনিরহাটে ২৪৮ দশমিক ২ একর, দিনাজপুরে ৮৯ একর এবং নীলফামারীতে ৭০ দশমিক ৫৯ একর জমিতে চা চাষ সম্প্রসারিত হয়। এরমধ্যে গত উৎপাদন মৌসুমে (২০২৩) চা চাষে আরও ৫৩ একর জমি নতুন যোগ হয়। এদিকে প্রতিবছর চা চাষের পরিধি বাড়লেও কাঁচা চা পাতার উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাষিরা। গত উৎপাদন মৌসুমে পঞ্চগড়ে কাঁচা চা পাতার মূল্য ১৮ টাকা নির্ধারণ থাকলেও ৮-১০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করতে পারেননি তারা। এছাড়া নানা অজুহাতে ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত ওজন কর্তন করে মূল্য পরিশোধ করা হয়। এতে চাষিরা প্রতিকেজি চা পাতার মূল্য পান মাত্র ৫-৬ টাকা। অথচ বাগান থেকে পাতা কর্তনের মজুরি দিতে হয় তিন টাকা করে।

এতে উৎপাদনের টাকাও ওঠে না চাষিদের। তারেক হোসেন নামে এক চাষি বলেন, ‘নির্ধারিত ১৮ টাকা কেজি দরে পাতা বিক্রি করতে পারলে আমরা লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাব। কিন্তু আমরা বিক্রি করতে পারছি মাত্র আট টাকা কেজি দরে। এর ওপর আবার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ওজন কর্তন করে দাম দেন কারখানা মালিকরা। এতে আমাদের পাতার দাম পড়ে ৫-৬ টাকা কেজি। এ অবস্থা চলতে থাকলে মানুষ চা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।’ পঞ্চগড় ফার-ইস্ট টি ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েদ উল হাসান প্রধান বলেন, ‘আমি এবার নতুন চা কারখানা দিয়েছি। কিছু চা বিক্রিও করেছি।

ভালো চা মানেই হলো একটি পাতা, দুটি কুঁড়ি। কিন্তু আমাদের চা-চাষি ভাইয়েরা ৭-৮টি পাতা পর্যন্ত কেটে কারখানায় নিয়ে আসেন। পাতার মান ভালো না হওয়ায় আমরা চা অকশন মার্কেটে ভালো দাম পাচ্ছি না। ভালোমানের পাতা পেলে আমরাও ভালোমানের চা তৈরি করতে পারব। তখন চাষিরাও ভালো দাম পাবেন।’ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, পঞ্চগড় ও এর আশপাশের এলাকার সমতল ভূমি চা-চাষের জন্য বেশ উপযোগী।

এজন্য এখানকার চা-চাষে আগ্রহী চাষিদের বিভিন্ন সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে চা-চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এতে প্রতিবছর উত্তরাঞ্চলে চা চাষের পরিধি বাড়ছে। এবারও নতুন করে প্রায় ৫৩ একর জমিতে চা-চাষ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের চায়ের মান কিছুটা খারাপের কারণে চাষিরা দাম কম পাচ্ছেন। তবে চা বোর্ডের পক্ষ থেকে ভালোমানের পাতা উৎপাদনে চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী উৎপাদন মৌসুমে চায়ের মান ভালো হলে চাষিরাও ভালো দাম পাবেন বলে আশা করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত