বস্তা সেলাই করে সংসার চলে শতাধিক শ্রমিকের

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

ছেঁড়া-ফাটা বস্তা জোগার করে সেগুলো সেলাই করে ব্যবহার উপযোগী কাজে শতাধিক নারী পুরুষ শ্রমিক নিয়োজিত। আর এর আয় থেকেই চলছে তাদের সংসার। এক প্রকার পুরাতন বস্তার মোকাম হয়েছে হিলি। আর এসব বস্তা দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দরের পার্শ্ববর্তী বাজারের বস্তার দোকান মালিক আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছেঁড়া-ফাটা বস্তা কিনে এনে এখানে শ্রমিকদের দিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করে রাখি। হিলি বন্দরের ব্যবসায়ী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে এসব বস্তা কিনে নিয়ে যান।’ ছেঁড়া বস্তা সেলাই করা শ্রমিক মো. দুলাল হোসেন বলেন, ‘আমি যখন যে দোকানে কাজ পাই, সেখানে গিয়ে বস্তা সেলাইয়ের কাজ করি। আমরা প্রায় অর্ধশত নারী-পুরুষ ছেঁড়া-ফাটা বস্তার সেলাইয়ের কাজ করি।’ নারী শ্রমিক রেহেনা বেগম বলেন, ‘অন্য কোনো কাজ করতে পারি না। তাই দোকানের সামনে বসে ছেঁড়া-ফাটা বস্তা সেলাই করে সংসার চালাই। দোকানদাররা আমাদের বস্তা প্রতি টাকা দেন। যে বস্তা বেশি ছেঁড়া-ফাটা থাকে, সেটা ৫ টাকা করে। আর যেটা একটু কম ছেঁড়া-ফাটা থাকে, সেটা ২ টাকা করে দেন। রেহেনা বেগম আরও বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বড় ছেঁড়া ৫০টি ও ছোট ছেঁড়া ৫০টি বস্তা সেলাই করতে পারি। এতে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা আয় হয়। তবে পুরুষ শ্রমিকরা আমাদের চেয়ে বেশি বস্তা সেলাই করেন। তাই তারা মজুরিও বেশি পান।’ মোকামে বস্তা কিনতে আসা হিলি বন্দরের ব্যবসায়ী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি পণ্য ট্রাক থেকে খালাস করার সময় অনেক বস্তা ছিঁড়ে-ফেটে যায়। তখন আবার নতুন করে বস্তায় ভরে পণ্যগুলো ওজন দিতে হয়। তাই আমাদের পুরোনো বস্তার প্রয়োজন হয়।’ রবিউল ইসলাম আরও বলেন, ‘নতুন বস্তা কিনতে গেলে তো দাম বেশি। মালিক তো নতুন বস্তার দাম দেন না। তাই আমরা পুরোনো বস্তায় পণ্যগুলো ভরে গন্তব্যে পৌঁছাই।’ হিলি বাজারের বস্তার দোকানদার মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘আমরা ঢাকা, গাজীপুরের ফিট কারখানা থেকে এসব ছেঁড়া-ফাটা বস্তা কিনে নিয়ে আসি। পরে স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করে বিক্রি করি। অনেক সময় ধানের মৌসুমে কৃষকরাও আমাদের কাছ থেকে এসব পুরোনো বস্তা কেনেন।’ মাসুদ রানা আরও বলেন, ‘গড় হিসেবে আমরা এসব ছেঁড়া-ফাটা বস্তা কিনে আনি। ট্রাক ভাড়া দিয়ে গড়ে প্রতিটি বস্তার দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা। সেলাই খরচ, ভ্যান ভাড়া দিয়ে ২৮ থেকে ৩০ টাকা পড়ে যায়। আর মানভেদে প্রতিটি বস্তা বিক্রি করি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। প্রতিটি বস্তায় সব খরচ বাদ দিয়ে ২ থেকে ৩ টাকা লাভ থাকে।’