কেশবপুরে সবুজের বুকে সূর্যমুখীর হলুদ হাসি

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

দিগন্তজুড়ে সবুজ ফসলের মাঠ, তার বুকে জমি হলুদে রাঙানো। যশোরের কেশবপুরে এ বছর ২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন কৃষকরা। সবুজ ফসলের মাঝে হলুদের হাসি আকৃষ্ট করছে সাধারণ মানুষকে। ফুটন্ত সূর্যমুখীগুলো তাকিয়ে আছে সূর্যের দিকে। আর এমন এক বৈচিত্র্য দেখতে প্রতিদিন আশপাশের এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করতে ও দৃশ্য দেখতে ছুটে আসছেন সূর্যমুখী হলুদ ছড়ানো জমিতে। কৃষক আব্দুল হামিদ শেখ নিজ বাড়ির পাশে এই সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। কেশবপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর মাত্র ২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে এ উপজেলায়। এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ হেক্টর জমি। গত বছরও এ উপজেলায় ২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছিলেন কৃষকেরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এবছর উপজেলার বড়েঙ্গা ও মঙ্গলকোট এলাকায় সূর্যমুখী চাষ করেছেন আবদুল হামিদ ও ইব্রাহিম হোসেন। সূর্যমূখী খেতের মালিক বড়েঙ্গা গ্রামের মৃত জামির আলী শেখের ছেলে আবদুল হামিদ শেখ ওই গ্রামের একজন সফল কৃষক। তিনি জানান, স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে শুধু বীজ দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত এই জমিতে তার প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। সূর্যমুখী চাষ করে এবার যে আনন্দ পাচ্ছি সেটা হচ্ছে, অনেকে আমার জমিতে এসে ছবি তুলছেন। সারা দিন সূর্যমূখী ফসল দেখতে এবং ছবি তুলতে মানুষ এখানে ভিড় করেন। দিনভর এমন দৃশ্য দেখে আনন্দও লাগে। কারণ তার এ সূর্যমূখী ক্ষেত দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধব সহ নানা বয়সী নানা শ্রেণি পেশার মানুষ ভিড় করছেন। এ ক্ষেতের উছিলায় অনেকের কাছে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন। তবে এর মধ্যেও আছে শঙ্কা। কৃষক আবদুল হামিদ শেখ আরো বলেন, অন্যান্য ফসল নগদ বিক্রি করা যায়। বাজারজাত করার আগেই জমি থেকেও ব্যবসায়িরা ফসল কিনে নেয়। সূর্যমূখী আমাদের এ এলাকায় উৎপাদন কম হয়, কৃষকের মধ্যে এখনো আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি। সূর্যমূখীর তৈল সংগ্রহে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিতে হবে। ফসল ওঠার পর লাভের হিসেব থেকেই চিন্তা করব, আগামীতে সূর্যমূখী চাষ করবেন কিনা। মঙ্গলকোট গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, এ বছর প্রথম সূর্যমুখীর চাষ করেছি। হলুদ ফুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে আমাকেও। প্রতিদিন এলাকার লোকেরা আমার জমিতে ছবি তুলতে আসেন। আমি এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি। কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে এ চাষ করা হয়েছে। আগামীতে আবারও সূর্যমুখীর চাষ করার ইচ্ছে আছে। এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন , এ বছর ২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে। কৃষক নিজ উদ্যোগে সূর্যমুখীর কোনো চাষ করেনি। সোয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে সূর্যমূখী তেল ব্যবহারে উৎসাহিত করার জন্য কৃষককে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিনামূলে বীজ দেওয়া হয়েছে। আগামীতে সোয়াবিনের পরিবর্তে তেলজাতীয় ফসল সরিসা, তিল ও সূর্যমুখীর চাষে কৃষকদের সরকার ভর্তুকি দিবে। এর বিস্তার ও উপযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে কৃষি অফিস। সূর্যমুখী ভোজ্য তেল হিসেবে স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী। সূর্যমুখী বীজের তেলে বিদ্যমান ভিটামিন-ই আমাদের ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখে। সূর্যমুখী চাষের বিস্তার ও উপযোগিতা বৃদ্ধির পাশপাশি জনপ্রিয়তার উদ্দেশ্যে স্থানীয় কৃষি অফিস বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।