ঢাকা ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লক্ষ্মীপুরের করাতিরহাটে সেতুর বেহালদশা

পলেস্তরা ভেঙে দেখা যাচ্ছে রড
লক্ষ্মীপুরের করাতিরহাটে সেতুর বেহালদশা

‘একটু ভারী যানবাহন উঠলেই থরথর করে কাঁপতে থাকে সেতুটি। ভয় হয় এই যেন ভেঙে পড়বে। পলেস্তরা ভেঙে রড দেখা যাচ্ছে। ফাটল ধরেছে পিলারগুলোতে। তবুও বছরের পর বছর এই সেতু দিয়ে দোয়া-দুরুদ পড়ে পার হই আমরা। কিন্তু ভয় কাটে না।’ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের করাতিরহাট সড়কের বেড়ির মাথা এলাকার সেতুটি নিয়ে এমনিভাবে তাদের দুর্ভোগের কথা জানাচ্ছিলেন স্থানীয়রা। এ সেতুটি দিয়েই করাতিরহাট এলাকায় উৎপাদিত ফসল, মেঘনা নদী থেকে মাছ আহরণ ও মেঘাচরের চাষাবাদকৃত ফসল বাজারজাত করা হয়। এছাড়া ৫০ হাজারেও বেশি মানুষের জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সেতুটি। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই বছরের পর বছর সেতুটি ব্যবহার করে আসছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দা মফিজ উদ্দিন, আবদুল হালিম, জয়নাল আবেদিন, শেফালি বেগম ও কুলসুম বেগমসহ কয়েকজন জানায়, প্রায় ৩৫ বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। তখন এ অঞ্চলে জনবসতি কম ছিল। এজন্যই এটি সরু করেই নির্মাণ করা হয়। এখন এ এলাকায় জনবসতি বেড়েছে। মানুষজন বেড়েছে। এখানে উৎপাদিত ফসল, মেঘনা নদী থেকে আহরিত মাছসহ বিভিন্ন কাজে বড় পিকআপ ভ্যান আসা যাওয়া করে। প্রতিদিনই শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা জেলা শহরে আসা-যাওয়া করে। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে ছোট ছোট ট্রলি, রিকশাভ্যান চলাচলও সরব রয়েছে। এতে সেতুটি এখন অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তবে সেতুটির বর্তমান যা অবস্থা তাতে যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। গাড়ি চলাচলের সময় দূর থেকে দেখা যায় সেতুটি থরথর করে কাঁপছে। এজন্য দোয়া-দুরুদ পড়েও সেতুটি পার হতে ভয় লাগে। অটোরিকশাচালক আবদুল করিম বলেন, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ। আমার রিকশা উঠলেও কেঁপে ওঠে। এখানে নতুন একটি সেতু প্রয়োজন। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখছি না। স্থানীয় বাসিন্দা শেফালি বেগম বলেন, ভারী গাড়ি উঠলে সেতুটি বেশি কাঁপে। তখন চালকরা খুব ধীরে ধীরে গাড়ি চালায়। ২-৩ বছর ধরে বড় গাড়ি দেখলে স্থানীয় লোকজন সেতুতে উঠতে নিষেধ করে। কিন্তু মালামাল নিয়ে এলে নির্ধারিত স্থানে যাওয়ার জন্য চালকরা বাঁধা মানে না। এ সেতুটি আমাদের চলাচলের অন্যতম মাধ্যম। এটি ভেঙে গেলে চলাচলের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা এখানে নেই। চেয়ারম্যান ও মেম্বররা সেতু করে দেবেন বলে আশ্বাস দিলেও এখনো কোনো খবর নেই। চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কামরুল সরকার বলেন, পলেস্তরা ও রেলিং ভেঙে সেতুটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি সেতুর উপরের অংশের কয়েকটি স্থানে আমি ঢালাই করে দিয়েছি। তবে নিচের অংশে সম্ভব হয়নি। ৪টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের চলাচলের অন্যতম মাধ্যম এ সেতু। দ্রুত এখানে নতুন সেতু প্রয়োজন। তা না হলে জরাজীর্ণ সেতুটি ভেঙে পড়ে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ছৈয়াল বলেন, নতুন সেতুর বরাদ্দের জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষ কাজ করছেন। এটি চলমান প্রক্রিয়াতে রয়েছে। তবে দ্রুত সেতুটি হলে এ অঞ্চলের মানুষের উপকার হবে। এ ব্যপারে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, নতুন সেতুর জন্য আবেদন করা আছে। এখনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অনুমোদন দিলে সেতুটি নতুন করেই নির্মাণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত