প্রকৃতিতে মৌ মৌ ঘ্রাণ

আম ও লিচুর মুকুলে সেজেছে ঋতুরাজ বসন্ত

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

আম ও লিচুর উপজেলা হিসেবে পরিচিতি উত্তর জনপদের দিনাজপুরের বিরামপুর। এ উপজেলায় এখন আম ও লিচুর মিষ্টি মুকুলের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি। মুকুলের সেই সুমিষ্ট সুবাস মাতিয়ে তুলছে সবার মন। ছয় ঋতুর এই বাংলাদেশে পাতাঝরা ষড়ঋতুর রাজা বসন্ত। আবহমান বাংলার সৌন্দর্যের রাজা বলে পরিচিত গ্রীষ্মকাল। ফাগুনের ছোঁয়ায় পলাশ-শিমুলের বনে লেগেছে আগুন রাঙা ফুলের মেলা। শীতের জড়তা কাটিয়ে কোকিলের সেই সুমধুর কুহুতানে মাতাল করতে আবারও ফিরে এলো বাংলার বুকে ঋতুরাজ বসন্ত। চাষি ও বাগান মালিকরা বাগানে পরিচর্চা নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। অবশ্য গাছে মুকুল আসার আগে থেকেই গাছের পরিচর্চা করে আসছেন তারা। যাতে করে গাছে মুকুল বা গুটি বাঁধার সময় কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হয়। এ উপজেলা ফজলি, খিড়সা, মোহনা, রাজভোগ, রুপালি, গোপালভোগসহ অন্যান্য জাতের আম ও চায়না থ্রি, বেদনা, বোম্বাই লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় চাষিরা নিজ উদ্যোগে প্রথমে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চারা সংগ্রহ করে বাগান তৈরি করলেও বর্তমানে তারা নিজেরাই চারা উৎপাদন করে তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সুফলও পেয়েছেন অনেকেই। উপজেলার প্রতিটি এলাকাজুড়ে এখন সর্বত্র গাছে গাছে শুধু আম ও লিচুর মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণ। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়ার উপক্রম যেন প্রতিটি আম ও লিচু গাছ। সেই সুবাদে মৌমাছিরাও আসতে শুরু করেছে মধু আহরণে। রঙিন-বন ফুলের সমারোহে প্রকৃতি যেমন সেজেছে বর্ণিল সাজে, তেমনি নতুন সাজে যেন সেজেছে বিরামপুর উপজেলার বাগানগুলো। আম ও লিচরু মুকুলের ভরপুর ঘ্রাণে সর্বত্র জানান দিচ্ছে বসন্তের শোভা। শোভা ছড়াচ্ছে নিজ মহিমায়। মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে বাগানগুলো। প্রায় ৮০ শতাংশ গাছেই এসেছে মুকুল।

বাগান মালিক, কৃষিবিদ, আম ও লিচু চাষিরা আশা করছেন বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া। অনুকূলে থাকলে এ উপজেলায় আমণ্ডলিচুর বাম্পার ফলন হবে। আম ও লিচু চাষে সফল কৃষক একইর গ্রামের মাহমুদুল হক জানান, আমার ২ হেক্টর জমিতে আম ও লিচু বাগান রয়েছে। সব গাছে মুকুল এসেছে। গত বছর আম ও লিচু থেকে অনেক টাকা আয় করেছি। মাহমুদুল হকের মতো উপজেলার নটকুমারী গ্রামের রাজিবুল আলম, দিওড় বড়খুর গ্রামের আমণ্ডচাষি এনামুল হক, আব্দুর রাজ্জাক, আনছার আলী, আনিছসহ অনেকেই আমের ও লিচুর বাগান তৈরি করেছেন। তারা জানান, ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ কম থাকায় এবার কাঙ্ক্ষিত ফলনের আশা করছেন তারা। সুবিধাভোগীদের সুফল দেখে চাষিরা আম ও লিচু চাষে উৎসাহিত হয়ে নিজ নিজ উদ্যোগে নতুন নতুন বাগান তৈরি করছেন। ধীরে ধীরে এ উপজেলাজুড়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে নতুন নতুন আমের ও লিচুর বাগান। উৎপাদিত আম ও লিচু মানসম্মত হওয়ায় চাহিদাও বাড়বে অনেক। উপজেলা কৃষিবিদ ও কৃষি কর্মকর্তা ফিরোজ আমম্মেদ বলেন, বিরামপুর উপজেলার বিরাজমান আবহাওয়া ও মাটি আম ও লিচু চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এ উপজেলা ১০৫ হেক্টর আম ও ১১৪ হেক্টর লিচু চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় আমের ও লিচুর উৎপাদন গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি পাওয়ার আশা করা যাচ্ছে। আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে ছাত্রাকজনিত রোগেও আমের ও লিচুর মুকুল-গুটি আক্রান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে ইতোমধ্যে আম ও লিচু চাষিদের গাছে মুকুল আসার আগে এবং গুটি হওয়ার পর নিয়মিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জৈব বালাইনাশক ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে আমসহ অন্যান্য ফল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না, হলে আমের ও লিচুর ফলন ভালো হবে আশা করছেন তিনি। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় লিচু গাছের সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ও আম ৮৪ হাজার।