রাস্তা নির্মাণে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন অব্যাহত

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলমগরি সিদ্দিকী, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)

শ্যামনগরের কৈখালী কোস্ট গার্ড অফিস এলাকা থেকে কালিঞ্চি স্লুইচগেট পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ভুগর্ভস্ত থেকে বালু উত্তোলন করায় এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশ হুমকিতে পড়েছে। নিয়মনীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করে কোস্ট গাড অফিস সংলগ্ন ধান ও মাছের ঘের থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রাত-দিন নিরবচ্ছিন্ন বালু উত্তলন করে দেড় কিলোমিটার ব্যাপী রাস্তা ভরাট করা হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন পার্শ্ববর্তী রাস্তা ও জমিতে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে, অপরদিকে সুন্দরবন সংলগ্ন হওয়ায় সুন্দরবনের গাছগাছালী ভেঙে পড়ছে। তেমনি বিকট শব্দে স্থানীয় পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিরক্ত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। সুন্দরবনের বাইরে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে- এছাড়া মহামান্য হাইকোর্টের ১৬৯২/২০১৭ নং রীটপিটিশন অমান্য করে বালু উত্তলোন করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদার বালু উত্তোলনকারীর সাথে চুক্তিতে বালু উত্তোলন করিয়ে নিচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের নানা ক্ষতি হয়। এর মধ্যে উদ্ভিদ ও প্রাণিকূলে নেতিবাচক পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ পানি ও বায়ুদূষণ হওয়ার মতো ঘটনা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষও আক্রান্ত হচ্ছে। বালু উত্তোলনের সময় সৃষ্ট বায়ুদূষণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের মধ্যে পরিবর্তন ঘটার ফলে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি তাদের খাদ্যের উৎসও ধ্বংস হচ্ছে। ফলে মৎস্য প্রজনন-প্রক্রিয়া পাল্টে যাওয়ার পাশাপাশি চাষাবাদের জমিও নষ্ট হচ্ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনে সব থেকে বড় যে ক্ষতি হয়, সেটা হচ্ছে প্রাকৃতিক ভূচিত্র নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে ওই এলাকার জনজীবনের ওপর স্থায়ী বিরূপ প্রভাব পরে। ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন বন্ধ না করা গেলে বাংলাদেশের পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর অনেক বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে দাবি করেন তিনি। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর উপধারা ১ অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্ব¡পূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারীকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব আইনের কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নজিবুল আলম বলেন, বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।