কুষ্টিয়ায় খাল দখল করে ভরাট

হুমকিতে কৃষি ও পরিবেশ

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচএম আরিফ, কুষ্টিয়া

দীর্ঘদিন ধরে নদী কমিশনের বিধি না মেনে কথিত উন্নয়নের অজুহাতে খোদ সরকারি দপ্তরের খামখেয়ালি ও অদূরদর্শিতার কারণেই কুষ্টিয়া সদর ও মিরপুর উপজেলার আংশিক কৃষি জমির জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, স্থানীয় জলপথ সম্প্রসারণে খননকৃত সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২০-২৫ মিটার চওড়া গড়াই খালটি এখন ভূমিদস্যুদের দখলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ খালটি ২০১৮ সালে উন্নয়নের কথা বলে কুষ্টিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ অনাপত্তিপত্রের মাধ্যমে নিজেদের আয়ত্বে নেয়। পরে এলজিইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদ্যোগে সরকারি অর্থব্যয়ে খালটির মূল প্রবাহ চ্যানেলে মাটি ভরাট করে একাধিক কালভার্ট ও রাস্তা নির্মাণ করার কারণেই দখলবাজির ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে। তবে এলজিইডির দাবি, খালটির ওপর যে কয়টি ব্রিজ-কালভার্ট করা হয়েছে, তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শ করেই করা হয়েছে। অপরদিকে এলজিইডির এ দাবি নাচক করে বাপাউবোর কুষ্টিয়া’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, কোনোরূপ এনওসি ছাড়াই এলজিইডি বিধি না মেনে এসব কালভার্ট নির্মাণ করেছে। বাপাউবো সূত্র জানায়, ১৯৪৯ সালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া নামক স্থান থেকে গড়াই নদীর ডান তীর হতে উৎসারিত হয়ে কমলাপুর, মঙ্গলবাড়িয়া বাজার, উদিবাড়ি, বাড়াদি, উদিবাড়ি কলোনি, চৌড়হাস মন্দিরপাড়া, চেচুয়া, ফুলবাড়িয়া, জগতি, বাইপাস হয়ে মিনাপাড়া পর্যন্ত খনন করে নির্মাণ করা হয় সাড়ে আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই গড়াই খালটি। বর্তমানে তা বেদখল হয়ে গেছে। নদী-খাল সুরক্ষা আইন না মেনে খালটির মূল প্রবাহ চ্যানেল ভরাট করে সড়ক বিভাগ একটি এবং এলজিইডি ১৫টি কালভার্টসহ রাস্তা নির্মাণের ফলেই খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কমলাপুর এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘উন্নয়নের কথা বলে খালের পাড়ে মাটি ভরাট করে তা দখল করে নেওয়া হচ্ছে।’ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের চাষি হালিম সেখ জানায়, ‘গড়াই খাল ভরাট হয়ে দখল হতে হতে কোনো কোনো জাগায় এর চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায় না।’ নদী পরিব্রাজক দল কুষ্টিয়ার সভাপতি খলিলুর রহমান মজু বলেন, ‘উন্নয়নের নামে পাড় বেঁধে-ভরাট করে কোনোভাবেই খাল দখল করা যাবে না। খাল বা নদীর সীমানার মধ্যে এমন কোনো কাজ করা যাবে না যাতে মূল প্রবাহ চ্যানেল বাধাগ্রস্ত হয়। যদিও এ ধরনের কান্ডজ্ঞানহীন কাজের অভিযোগ সড়ক বিভাগ ও এলজিইডির মতো স্বয়ং সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই রয়েছে অসংখ্য।’ এদিকে গড়াই খালটি সংস্কার করতে ২০১৮ সালে বাপাউবোর অনাপত্তিপত্রের মাধ্যমে নিজেদের আয়ত্তে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কুষ্টিয়া পৌরসভার সদ্য সাবেক নির্বাহী কৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, খালটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে ঘাটতি ছিল। তবে অদূরদর্শিতা, অবহেলা ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে খাল দখল হয়েছে- এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এলজিইডি কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ওই খালের ওপর ব্রিজ-কালভার্ট যে কয়টা হয়েছে, তার সবগুলোই পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনাপত্তি নিয়েই করা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো জায়গায় সরকারি অন্যান্য সংস্থা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আবেদন করলে সেখানকার মূল অবকাঠামো অক্ষুন্ন রাখাসহ কিছু শর্তসাপেক্ষে আমরা অনাপত্তি দেই। কিন্তু কুষ্টিয়া পৌর এলাকাধীন কমলাপুর ও মঙ্গলবাড়িয়া এলাকায় গড়াই খালের ওপর ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণে এলজিইডি আমাদের কাছ থেকে কোনো এনওসি নেয়নি। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়ালেও উন্নয়নের নামে খালের পাড় বেঁধে ভরাট করে খাল দখল করার কারণে একদিকে যেমন কৃষি উদপাদন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে খালটির মূল প্রবাহ চ্যানেল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। এলাকাবাসীর দাবি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।