ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কেশবপুরে কেমিক্যালে পাকানো কলায় বাজার সয়লাব

কেশবপুরে কেমিক্যালে পাকানো কলায় বাজার সয়লাব

যশোরের কেশবপুরে রমজান মাসে বিষাক্ত কেমিক্যালে পাকানো কলায় সয়লাব হয়ে গেছে। রমজান মাসে ব্যাপক চাহিদা থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া উঠেছেন। উপজেলার বিভিন্ন কলার আড়তে কলা পাকানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যালের মাধ্যমে। প্রশাসনের নেই কোন ভুমিকা। জানা গেছে, বিষাক্ত কেমিক্যালে পাকানো কলা সরবরাহ করা হচ্ছে কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার, ফুটপাতের দোকান, স্কুল-কলেজের পাশের দোকানসহ নানা স্থানে। এছাড়া এসব বিষাক্ত কেমিক্যালে পাকানো কলা ভ্যানে করে প্রতিটি বাসা বাড়ির সামনে বিক্রি করা হচ্ছে। কলা পাকা মনে হলেও উপরে খোসা হলুদ কিন্তু ভেতরে কাঁচা। রমজান মাস ছাড়াও সারা বছর এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা একইভাবে কলা পাকিয়ে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে আসছে। এসব বিষাক্ত কলা খেয়ে শিশু ও বৃদ্ধসহ সব শ্রেণির মানুষ দিনদিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। গতকাল কেশবপুর শহরসহ উপজেলার হাসানপুর, মঙ্গলকোট, সাগরদাঁড়ি, চিংড়া, ভান্ডারখোলা, সাতবাড়িয়া, জাহানপু, কলাগাছি, ভরত ভায়না, বগা, গৌরিঘোনাসহ বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা ও অপরিপক্ব কলা বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো। খুচরা ব্যাবসায়ীরা জানান, আমরা আড়ত থেকে পাকা কলা ক্রয় করে বাজারে খুচরা বিক্রি করি। অধিকাংশ আড়তে বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে কলা পাকানো হয় বলে তাঁরা জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কলার বেপারী বলেন, তারা দ্রুত কলা পাকানোর কৌশল হিসেবে বাগান থেকে কলা কেনার পর কলায় প্রমোট ও রিপেনসহ নানা ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকেন। ওই কেমিক্যাল মিশ্রিত কলা দুই-এক দিনের মধ্যেই নরম ও হলদে রং ধারণ করে খাবার উপযোগী হয়, যা তাদের বিক্রি করতে সহজ হয়। আড়তের এক কর্মচারী নাম না প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিনই রাতে কাঁচা কলা আসে। আমরা পানিতে ইথিফন দিয়ে সেই পানিতে কলার কাঁদি ডুবাই। তারপর সেগুলো আবার প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখি। দ্রুত কলার দরকার হলে কখনো কখনো আগুন জ্বালিয়ে তাপ দেই। তাতেই কলা পেকে যায়। এক কাঁদি কলা পাকাতে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে বলে জানান তিনি। মঙ্গলবার কেশবপুর বাজারে কলা কিনতে আসা আবদুল জলিল মোড়ল, মনিরুজ্জামান মনি, শহিদুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, নুরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, আমরা তো প্রতিদিনই কলা খেয়ে থাকি। আমাদের বাচ্চাদের জন্য পাকা কলা কিনতে হয়। কিন্তু রমজান মাসে দেখছি এসব কলার ভেতর শক্তই থাকে। এক দিনের বেশি রাখলে নষ্ট হয়ে যায়। কলায় কোনো পুষ্টি থাকে না। আরেক ক্রেতা বলেন, আগে কলার অন্য রকম একটা স্বাদ ছিল। এখন আর তা নেই। তিনি বলেন, এখন কলা দেখলেই বোঝা যায় এগুলো গাছে পাকেনি। জোর করে পাকানো হয়েছে। অর্থাৎ বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হচ্ছে। আর এসব কলা খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সাধারণ মানুষ। অথচ কলার দাম নিচ্ছে কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই বলেও জানান তারা। কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, বিষাক্ত এসব দাহ্য পদার্থ মিশানো কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সঙ্গে সঙ্গে বমিভাব ও ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। কেমিক্যাল মিশ্রিত কোনো খাদ্য গ্রহণ করলে তার প্রভাব পড়ে লিভার ও কিডনির ওপর। তিনি আরো বলেন, ওই সব খাদ্য গ্রহণের পরে তা দাহ্যে পরিণত হওয়ার পর নিঃসরণ ঘটে লিভার এবং কিডনির মাধ্যমে। ফলে কেমিক্যাল মেশানো খাদ্য শরীরের এ দুটি অংশের ওপর প্রভাব ফেললেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিডনিকেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তুহিন হোসেন বলেন, এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত