ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাবনায় হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের আমদানি

দাম নেমে অর্ধেকে
পাবনায় হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের আমদানি

দেশের মোট পেঁয়াজের প্রায় ৩০ শতাংশই উৎপাদিত হয় উত্তরের জেলা পাবনা। সম্প্রতি পাবনা সদর, সুজানগর ও সাঁথিয়ার বাজারগুলোতে পেঁয়াজের আমদানি হঠাৎ বেড়ে ব্যাপক দরপতন শুরু হয়েছে। ১০ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। ৩ হাজার ৮০০ টাকা দরের প্রতি মণ পেঁয়াজ এখন ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, স্থানীয় কৃষকরা অধিক দামের আশায় অপরিপক্ক পেঁয়াজ জমি থেকে তুলে বাজারে আনছেন। এতে বাজারগুলোতে হঠাৎ আমদানি বেড়ে গেছে। অন্যদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা থাকলেও পেঁয়াজ না আসলেও আমদানির অজুহাতে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সিন্ডিকেট তৈরি করায় এই দরপতন ঘটেছে বলে দাবি কৃষকদের। পাবনার হাজিরহাটের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী কৌশিক মন্ডল বলেন, একদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবর। অন্যদিকে কৃষকরা জমি থেকে অপরিপক্ক পেঁয়াজ তুলে বাজারে নিয়ে আসছে। বর্তমানে বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি। আমরা মানভেদে পেঁয়াজ ক্রয় করি। এগুলো ঢাকার বড় বড় পোকামে পেঁয়াজ দিয়ে থাকি। পাবনা সদরের দুবলিয়া কামারডাঙ্গার পাইকারি ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, পেঁয়াজের ব্যাপক দরপতন হওয়ায় আমরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। গ্রামাঞ্চল থেকে বা বাজার থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে ঢাকায় কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। এজন্য আমরা পেঁয়াজ দেখে শুনে কিনছি। প্রতিদিন ঢাকায় তিন ট্রাক করে পেঁয়াজ পাঠাতাম, আজকে এক ট্রাকের মতো পাঠাব। পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাবনায় দুই জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়। এর একটি হচ্ছে মুড়িকাটা জাতের আগাম পেঁয়াজ। অপরটি মৌসুমী পেঁয়াজ বা হালিকাটা পেঁয়াজ নামে পরিচিত। চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন। আগাম জাতের এই পেঁয়াজ এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। অন্যদিকে মৌসুমি হালিকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে এই পেঁয়াজ বাজারে আসছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। গতকাল সকালে পাবনার হাজিরহাটে ভালো মানের পেঁয়াজ ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। গত ১০ দিন আগে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে বেড়া উপজেলার চতুরহাটে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা করে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। অতিরিক্ত আমদানির কারণে অনেক কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি না করে বাড়ি নিয়ে গেছেন। গত সোমবার পাবনা সদরের পুষ্পপাড়া হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত। গত রোববার আতাইকুলা হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ফলে অনেক কৃষক হতাশ হয়েছেন। লোকসানের শঙ্কায় বিক্রি না করেই পেঁয়াজ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। পাবনার বেড়ার চতুরহাটের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, রমজানের আগে বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কম ছিল। কিন্তু রমজান শুরু হতেই হঠাৎ পেঁয়াজের দরপতন শুরু হয়। যেখানে গত ১০ দিন আগে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৩ হাজার ৫০০ থেতে ৩ হাজার ৭০০ টাকা করে আজকে সেই পেঁয়াজ ২ হাজার টাকার নিচে। সকালে একটু বেশি দাম গেলেও সকাল ১০টা নাগাদ একটু দাম কমে যায়। অনেক সময় বাজারে হঠাৎ করেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে পেঁয়াজের দাম কমায়। এদিকে পেঁয়াজের এই দরপতনে কৃষকের মধ্যে হাতাশা তৈরি হয়েছে। দাম কমের দিকে থাকলে তাদের লোকসান হবে বলে মনে করছেন তারা। বর্তমান দামে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও তারা কিছু লাভ পাবেন। তবে পুরোপুরি মৌসুম শুরু হলে দাম আরও কমবে। দাম আরও কমে গেলে তারা লোকসানে পড়বেন। সদরের চরপাড়া গ্রামের মোক্তার হোসেন বলেন, এ বছর অধিক দামের আশায় ৫ বিঘা জমিতে হালিকাটা পেঁয়াজ আবাদ করেছিলাম। প্রথমে এক মণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে। এখন বিক্রি করতেছি ১ হাজার ৬০০ টাকা করে। মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষিরা অনেক দাম পেলেও দেশে পেঁয়াজের সংকটের সময় হালিকাটা পেঁয়াজের ব্যাপক দরপতন শুরু হয়েছে। এভাবে পেঁয়াজের দাম কমতে থাকলে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, বাজারে পেঁয়াজের একটু বেশি আমদানি হওয়ায় দাম কিছুটা কমছে। বাজারে কিছু ব্যবসায়ীরা অনেক সময় সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে থাকেন। কৃষকরা যেন পেঁয়াজের দাম পান সে বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত